ঈদ সামনে রেখে খুলনায় বিভিন্ন বিপণিবিতানে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ঈদ যত এগিয়ে আসছে, বাজারে ক্রেতার সংখ্যা তত বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করছেন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার নগরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। এর পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে ঈদের পোশাক। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে শোরুমের পাশাপাশি অনলাইনে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন অনেকেই।
নগরের ডাকবাংলো এলাকায় ঘোরাঘুরি করে পণ্য কিনছিলেন আশা রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন। তিনি বলেন, নিজে দেখেশুনে পণ্য কেনার আনন্দই আলাদা। সে ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ জন্যই বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের পোশাক কিনছেন। অন্যদিকে অনলাইনে এভাবে পোশাক কেনার সুযোগ কম বলে মনে করেন তিনি।
নগরের বিপণিবিতান শপিং কমপ্লেক্সের দোকান বিসমিল্লাহ ফেব্রিকসের কর্মী মো. লিটন হাওলাদার বলেন, মেয়েদের পোশাকের বৈচিত্র্য বেশি। পাকিস্তানি পোশাকের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। দেড় থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে ভালো পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঈদের হালচাল অনুযায়ী পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে মেয়েদের ভালো পোশাক বাজারে এসেছে।
অপর দিকে অনলাইনে সাধারণত পাঞ্জাবি, মেয়ে ও শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। যাঁরা ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন না, তাঁরাই মূলত অনলাইনের ক্রেতা।
খুলনা নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিউলি বেগম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে একটির বয়স মাত্র সাত মাস, অন্যটির চার বছর। ঈদসহ যেকোনো কেনাকাটা অনলাইনে করতে পছন্দ করেন তিনি। এবার ঈদেও বেশির ভাগ জামাকাপড় অনলাইন থেকে কিনবেন বলে জানান শিউলি বেগম। তিনি বলেন, সন্তান কোলে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা সম্ভব নয়। এ কারণে অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের ও সন্তানদের জন্য জামাকাপড় কিনছেন।
শিউলি বেগমের মতে, অনলাইনে কেনাকাটা এখন অনেক সহজ। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান পণ্য হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়। সে ক্ষেত্রে পণ্য পছন্দ না হলে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। তা ছাড়া নিজের সাধ্যের মধ্যে দর-কষাকষি ছাড়াই পণ্য কেনা যায়। সব মিলিয়ে অনলাইন কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।
অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে, এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন কেনাকাটা। ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটা আরও সরগরম হয়েছে। ইতিমধ্যে গরম পড়তে শুরু করেছে, তাই এবার ঈদে হালকা, সুতি কাপড়ের পোশাক বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা।
খুলনার নিউমার্কেটের পাশে ইডেন প্লাজায় শোরুম আছে প্রাপ্তি ফ্যাশন হাউসের। নিজেরাই পোশাক তৈরি করে শোরুমে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি নিজস্ব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনেও পণ্য বিক্রি করেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘শোরুমের চেয়ে অনলাইনেই পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনে পণ্য কেনার সুবিধা হচ্ছে, মানুষ ঘরে বসেই নিজের কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনতে পারছেন। পছন্দ না হলে ফেরত দিতে পারছেন। কোনো ঝামেলা ছাড়াই পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারাও।’
নগরের রয়েল মোড়ে ফ্যাশন জোন বাই লিন্ডা নামের একটি শোরুম আছে ফাতেমাতুজ জোহরা লিন্ডার। পাশাপাশি অনলাইনে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেন তিনি। ফাতেমাতুজ জোহরা প্রথম আলোকে বলেন, যেসব অনলাইন বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে, মানুষ সেখান থেকে পণ্য কিনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ঈদ সামনে রেখে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে সক্রিয় থাকেন। তাঁদের প্রতারণার কারণে অনলাইনে পণ্য কিনতে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। সাধারণত ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পণ্য বেশি কিনছেন ক্রেতারা। ভারত-পাকিস্তানের তৈরি মেয়েদের পোশাক বেশি চলছে। এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে তৈরি ও নকশা করা পোশাকের বিক্রিও ভালো।