প্রথম আলোর কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক এম সাদেক আর নেই
প্রথম আলোর কুমিল্লা কার্যালয়ে কর্মরত ফটোসাংবাদিক এম সাদেক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে কুমিল্লা নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কুমিল্লা শহরতলির গোমতী নদীর পাড়ে চানপুর এলাকায় এম সাদেক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এম সাদেক কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক। প্রথম আলোর শুরু থেকেই কুমিল্লা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নগরের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা এম সাদেক মৃত্যুকালে এক ছেলে, স্ত্রী, পুত্রবধূ, নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী-শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদ্রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তৃতীশ চন্দ্র ঘোষ জানান, সাংবাদিক এম সাদেকের প্রথমে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে হাসপাতালে এনে সিসিইউতে চিকিৎসা শুরুর মধ্যেই আবার হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। এরপর দ্রুত তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এর মধ্যেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরে বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এম সাদেক যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলো কুমিল্লার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা (জুয়েল)। মাসুদ রানা বলেন, গোমতী নদীতে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব চলছে। এ উৎসবের ছবি তোলার জন্য আজ সকালে এম সাদেক গোমতী নদীর পাড়ে আসেন। বেলা ১১টার দিকে তিনি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করছিলেন। একপর্যায়ে মাথাব্যথা ও বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। পরে তাঁকে গোমতী নদীর চানপুর সেতুসংলগ্ন একটি দোকানে বসিয়ে প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়। আবদুর রহমান দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে সাদেককে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আবদুর রহমান বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সে তোলার কিছুক্ষণ পরই সাদেক ভাই একবার বমি করেন। তিনি বারবার বলছিলেন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। এরই মধ্যে সাদেক ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে পৌঁছান। বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হলেও এর প্রায় এক ঘণ্টা আগেই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন সাদেক ভাই আর নেই। সাদেক ভাইয়ের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর। তিনি একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন। প্রথম আলোর জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।’
এম সাদেককে হাসপাতালে আনার পর থেকেই পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি তাঁর সহকর্মী, এলাকার লোকজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা হাসপাতালে ভিড় করতে থাকেন। জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক এম সাদেকের মৃত্যুতে কুমিল্লার সাংবাদিকদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এম সাদেকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক (ফারুক), সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসানসহ কুমিল্লার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। সোমবার বাদ মাগরিব কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এম সাদেকের প্রথম জানাজা হবে। এরপর বাদ এশা অশোকতলা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে অশোকতলা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।