ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি, না দিলে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি

চাঁদাবাজিপ্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না দিলে ফেসবুকে বিষোদ্‌গার ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে চক্রটি। এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা।

হুমকি পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চক্রটি আওয়ামী লীগের নেতা, সরকারি–বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্নজনকে মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা চাইছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর ও ‘নতুন বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন আইডি থেকে এসব হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে এসব অভিযোগ নিয়ে কোতোয়ালি থানায় কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ নামের একটি আইডি থেকে তাঁকে কল দিয়ে দেখা করার কথা বলা হয়। একসময় বেশ কিছু টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়া না হলে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়ে বলা হয়, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আমার সাথে যোগাযোগ না করলে আপনার নামে ছাত্র নির্যাতনের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।’ এমন অবস্থায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যলয়ে এক কর্মকর্তাকে আকাশ নামের এক ব্যক্তি ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, ‘আপনি অনেক অবৈধ টাকা কামিয়েছেন। আমাকে টাকা না দিলে আপনি ফেঁসে যাবেন।’ অব্যাহতভাবে এমন হুমকি-ধমকির বিষয়ে ওই কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান জানান, তিন দিন ধরে তিনি ছুটিতে ফরিদপুরের বাইরে আছেন। চাঁদ চাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। শুক্রবার তিনি কাজে যোগ দেবেন। তখন তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। অভিযোগ জমা পড়লে তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন।

জেলা ভূমি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাও ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ওই কর্মকর্তা নিজের চাকরির কথা চিন্তা করে কিছু টাকা দিয়ে রেহাই পান। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ছাত্রদের নাম ভাঙিয়ে এ চক্র সরাসরি দেখা না করে মুঠোফোনে ও অন্যান্য মাধমে টাকা নিচ্ছে। যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদপুরের সমন্বয়ক আবরার ইতু বলেন, ‘আমাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এ–জাতীয় বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কেউই এমন কাজ করতে পারে না। আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং একটি সুযোগসন্ধানী চক্র বিভিন্নজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা টাকা চাইবে, তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। আমরা এ চক্রটিকে ধরতে কাজ শুরু করেছি।’