মধ্যরাতে কড়া পুলিশি পাহারায় যুবদল কর্মী শাওনের লাশ দাফন
মধ্যরাতে কড়া পুলিশি পাহারায় নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের জানাজা ও লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া একটায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়। হস্তান্তরের পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি করে শাওনের লাশ দাফন করা হয়।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের উপস্থিতিতে নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান ও মামা মোতাহার হোসেনের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পাহারায় শাওনের লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে চিকিৎসকেরা শাওনের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে শাওনের চাচা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া একটায় নবীনগর শাহওয়াল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে শাওনের লাশ নবীনগর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জানাজায় তিনিসহ শাওনের আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার প্রায় তিন থেকে চার শ লোক অংশ নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
লাশ দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, শাওনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাঁরা রাতেই লাশ দাফন সম্পন্ন করেছেন।
শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁকে যুবদলের কর্মী বলে দাবি করে আসছেন। বিএনপির মিছিলে শাওন প্রধানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, শাওন প্রধান যুবদল কর্মী। তিনি বিভিন্ন সময় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। শাওনের দূরসম্পর্কের চাচা আওয়ামী লীগ নেতার কারণে এখন তাঁরা শাওনের হত্যার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
শাওনকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে মিছিল
গতকাল সন্ধ্যায় যুবদল কর্মী শাওন প্রধানকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নবীনগর এলাকায় নিহত শাওনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মিছিলে অংশ নেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর চাচাতো ভাতিজা। শাওন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু ছাড়াও পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন পুলিশের সদস্যসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।
এ সময় ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকা ও ২ নম্বর রেলগেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে চারটি মোটরসাইকেলে আগুনসহ সাত থেকে আটটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
শাওন প্রধান ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকায়।