আশুলিয়ায় আজও শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ
পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা মানছেন না আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা। আশুলিয়ার কয়েকটি স্থানে আজ বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে শিল্প পুলিশ-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার এ বি এম রশিদুল বারী ও পথচারী কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও শ্রমিকেরা বলেন, আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, কাঠগড়ার বিভিন্ন কারখানায় সকালে যথাসময়ে উপস্থিত হন শ্রমিকেরা। তবে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে বসে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়। জামগড়া এলাকায় ছুটি ঘোষণার পর শ্রমিকেরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে জড়ো হন। কিছু সময় পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। কিছু শ্রমিক এ এলাকার কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে আরও কিছু কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে আমাদের একজন সহকারী পুলিশ সুপার আহত হয়েছেন। তিনি তলপেটে আঘাত পেয়েছেন।’
মো. আরিফ নামের আহত এক শ্রমিক আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা কারখানায় কাজ করছিলাম। ১০টার দিকে কারখানার বাইরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে পরে আমাদের কারখানা ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। কারখানা থেকে বের হওয়ার পর শ্রমিকদের ছোড়া ইট এসে আমার মাথায় লাগে। আরও কয়েকজন শ্রমিক ব্যথা পাইছে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল মারলে সবাই এদিক–সেদিক চলে যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য সড়কে জড়ো হলে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর করেন। এ সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে গাড়ির চালক নাছির আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চালক নাছিরের স্বজন মো. সিদ্দিক বলেন, নাছির ইপিজেড থেকে একটি ট্রিপ নিয়ে উত্তরার দিকে যাচ্ছিলেন। নরসিংহপুর এলাকায় বিক্ষোভের মধ্যে পড়লে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন শ্রমিকেরা।
এদিকে বেলা দেড়টার দিকে নরসিংহপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের সামনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক সাংবাদিককে মারধর করেছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁর ক্যামেরা ও মুঠোফোন শ্রমিকেরা নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আহত ওই সাংবাদিকের নাম এইচ এম আতিক। তিনি দৈনিক সময়ের কণ্ঠ পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘দুপুরে নরসিংহপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় লাঞ্চের ছুটি দিলে নাসা গ্রুপের শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। হঠাৎ শ্রমিকেরা গলায় পরিচয়পত্র দেখে “সাংবাদিক” বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং আমাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকেরা আমার সঙ্গে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ও মুঠোফোন নিয়ে যান।’