তৃণমূলের তৈমুরের জমি কমেছে, আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের গত দুই বছরে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা করা অর্থসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক আয় বেড়েছে দেড় গুণ। সেই সঙ্গে গত দুই বছরে তাঁর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা, ব্যাংক জমাকৃত অর্থ, এফডিআরসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণ।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করেন তৈমুর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগদলীয় মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। সে সময় তাঁর দাখিল করা হলফনামা ও এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাখিল করা মনোনয়নপত্র বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য দুই বছরের ব্যবধানে তাঁর স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষি ও অকৃষিজমির পরিমাণ কমেছে।
তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তৈমুর আলম বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বছরে ভাড়া দেখিয়েছিলেন ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনি বাড়ি ও দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে আয় করেন ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০২২ সালে আইন পেশা থেকে তাঁর বছরে আয় সোয়া দুই লাখ টাকা ছিল। এখন তিনি এই পেশা থেকে আয় করেন ৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দুই বছর আগে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর আয় ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
দুই বছর আগে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তৈমুর আলমের নামে নগদ ৫ লাখ টাকা ছিল। তার নিজের নামে ৫ ভরি সোনা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, খাট, সোফা দেখানো হয়েছিল। এবারের হলফনামা অনুযায়ী তৈমুরের নগদ ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকাসহ মোট অস্থাবর সম্পদ হয়েছে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। সোনার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৬ ভরি। গত হলফনামায় যৌথ মালিকানায় থাকা ২০০ শতাংশ কৃষিজমি ও ৩০ শতাংশ অকৃষিজমি দেখানো হলেও এবার তা দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈমুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ মালিকানায় থাকা জমি বিক্রি করায় নগদ টাকা ও ব্যাংকে জমার অর্থ বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে একজন আমেরিকা ও লন্ডন থাকে। তারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়।’
তৈমুর আলম গত হলফনামায় স্ত্রী হালিমা ফারজানার নামে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা দেখিয়েছিলে দুই লাখ। এ ছাড়া ১২ ভরি সোনা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এসি, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন ও আসবাবপত্রের মধ্যে আলমারি, শোকেস, টেবিল, চেয়ার দেখানো হয়। এবার হালিমা ফারজানার নামে নগদ ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬০ লাখ টাকা, এফডিআর ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকাসহ মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তৈমুর আলম বলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবাই বিদেশে থাকেন। দেশে থাকেন একমাত্র তাঁর স্ত্রী। শ্বশুরবাড়ি মানিকগঞ্জে দৌলতপুর গ্রামে পারিবারিকভাবে মসজিদ নির্মাণ করছেন তাঁরা। সেই মসজিদ নির্মাণের টাকা তাঁর স্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রতিবছর বিদেশে থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজন জাকাত, ফিতরা ও কোরবানির টাকাও তাঁর স্ত্রীর কাছে পাঠান। আইন পেশা থেকেও ভালো টাকা আয় করেন তিনি।
পিএইচডি ডিগ্রিধারী তৈমুর পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন সুপ্রিম কোটের (অ্যাপিলেট ডিভিশন) আইনজীবী। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১০। এর মধ্যে পাঁচটি মামলা আদালতে বিচারাধীন, উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত তিনটি। অভিযোগ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে দুটি মামলা।
এ আসনে তৈমুর ছাড়াও আওয়ামী লীগদলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক, তাঁর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজা, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাহান ভুঁইয়া, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ শহীদুল ইসলাম, জাকের পার্টির জোবায়ের আলম ও জাতীয় পার্টি সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন প্রার্থী হয়েছেন।