নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ নেতা-কর্মীকে শাস্তি
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ৪ নেতা-কর্মীর সনদ বাতিলসহ ১৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে আজ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চিঠি জারি করা হয়। এতে চারজনের সনদ বাতিল, একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত, নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলে আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাঈম আবদুল্লাহর (যাযাবর নাঈম) অনুসারীদের সঙ্গে মাহফুজুর রাজ্জাকের (অনিক) অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারকে আহ্বায়ক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ মেহেদী উল্ল্যাহকে সদস্য এবং প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনে ভিত্তিতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ ও ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফোকলোর বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাঈম আবদুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাবেক উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লের স্নাতকের সনদ বাতিল, ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছুরের স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী তানভীর আহমেদের স্নাতকের সনদ বাতিল এবং অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির স্নাতকোত্তরের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
সনদ স্থগিত হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী হাবিবুল্লাহর স্নাতকোত্তর সনদ এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী নয়ন হাসানের স্নাতকের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন থিয়েটার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল হককে এক বছর, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল কবীরকে তিন বছর, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হানকে তিন বছর, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গালিব ফয়সালকে দুই বছর, চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানকে তিন বছর, আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলামকে এক বছর, পপুলেশন সায়েন্সের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পবিত্র মণ্ডলকে এক বছর এবং চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের পর সিন্ডিকেট সভায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়। আশা করছেন, এখন আরও শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশে তাঁদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবেন।