পদ্মার চরে বিষটোপে হত্যা করা আরও ৪১ পাখি উদ্ধার, শিকারির কারাদণ্ড

মৃত পাখিগুলা উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন বন বিভাগের কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার পদ্মার চরেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে বিষটোপে হত্যা করা আরও পাখি পড়ে আছে, নদীর পানিতেও ভেসে যাচ্ছে—এই খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা আজ মঙ্গলবার দুপুরের পরে ছুটে যান পদ্মা নদীর তীরে। তাঁরা একটি ইগল, ভুবন চিল ও বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৪১টি পরিযায়ী পাখি উদ্ধার করে সন্ধ্যায় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে সকালে তিনটি তিলিহাঁস ও একটি পিয়ং হাঁস উদ্ধার করা হয় এবং শিকারির তিন দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

স্বেচ্ছাসেবী নাসিমুজ্জামান জানান, একটি অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় তাঁরা খবর পান, মৃত অনেক পাখি নদীর পানিতে ভেসে যাচ্ছে। অনেক পাখি পদ্মার চরে মরে পড়ে রয়েছে। তাঁরা ওই অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে নৌকা নিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসের দক্ষিণ পাশে পদ্মা নদীতে নেমে যান। তারা একটি চরেই ৪১টি মৃত পাখি পড়ে থাকতে দেখেন। ইগলটি মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল, প্রায় তাদের হাতের ওপর পাখিটি মারা গেল। ভুবন চিলটা আরও আগে মারা গেছে। হাঁসগুলো সব এখানে–ওখানে মরে পড়ে রয়েছে। এত পাখি মরে পড়ে আছে দেখে তাঁরা দিশেহারা হয়ে যান। তাঁরা বন বিভাগে খবর দেন। সন্ধ্যায় পুলিশ লাইনস ঘাটের নিচে নৌকা ভিড়লে অনেক মানুষ পাখি দেখে আহাজারি করেন। এ সময় বন বিভাগের ফরেস্টার গোলাম কাবির ও জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মানিকচন্দ্র দে পাখিগুলো বস্তায় ভরে নিয়ে যান।

এর আগে আজ ভোরে রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা নৌ পুলিশের সঙ্গে অভিযান চালিয়ে এক শিকারিকে চারটি হাঁসসহ আটক করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে রাজশাহী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক জামান তাঁর তিন দিনের কারাদণ্ড দেন। ওই পাখিশিকারির নাম লিটন হোসেন (৪০)। তাঁর বাবার নাম তাজি মণ্ডল। বাড়ি রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায়।

লিটন হোসেনের কাছ থেকে বিষটোপ দিয়ে হত্যা করা তিনটি তিলিহাঁস ও একটি পিয়ং হাঁসসহ পাখি ধরার ৩০০ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। জালটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শিকারিকে ধরার জন্য ভোর থেকে কৃষকের পোশাক পরে কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছিলেন।

আরও পড়ুন

নৌ পুলিশের রাজশাহী অঞ্চলের পরিদর্শক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, লিটন বিষটোপে পাখি হত্যা করেন। ভোরে তিনি মৃত পাখি নিয়ে চর থেকে আসবেন, এমন খবর পেয়ে নৌ পুলিশ ও বন বিভাগ যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় চারটি মৃত পাতি তিলিহাঁসসহ হাতেনাতে তাঁকে আটক করা হয়।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, সকালের অভিযান তারা তিনটি মৃত পাখিসহ তাঁকে ধরেছিলেন। পরে বিষক্রিয়ায় আরও পাখি মারা গেছে। লিটন রাতে পদ্মার চরে বিষটোপ দেন। এই বিষটোপ খেয়ে পাখি মারা যায়। সকালে লিটন মৃত পাখি উদ্ধার করেন। এরপর চরেই মৃত পাখির গলা কাটা হয়। পরে এই মৃত পাখি নগরের বিভিন্ন হোটেল–রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হয়। কেউ যাতে সন্দেহ না করেন, সে জন্য লিটন কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরার নাম করে নদীতে নামতেন; কিন্তু তার আসল কাজ ছিল বিষটোপে পাখি হত্যা করা।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসে। রাজশাহী নগরের পাঁচ-ছয়জন শিকারি এই চর থেকে পরিযায়ী পাখি শিকার করেন। তারা ব্যবহার করেন বিষটোপ। এর আগে ৯ জানুয়ারি শ্রীরামপুর এলাকার এক শিকারির বাড়ি থেকে নয়টি জবাই করা চখাচখি উদ্ধার করে বন বিভাগ। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিকারি পালিয়ে যায়।