গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ
সংস্কারহীন ব্যারাক এখন বসবাসের অনুপযোগী
মেঝে পাকা করে টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে ২০১০ সালে ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। এসব ব্যারাকে মোট ৪৬০টি পরিবার বসবাসের সুযোগ পায়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে ব্যারাক নির্মাণের ১৪ বছরেও মেরামত করা হয়নি। ফলে ব্যারাকের বেশির ভাগ ঘর বেহাল। টিনের ছাউনি ও বেড়া নষ্ট হয়ে গেছে। কোনোটা হেলে গেছে। এসব ঘরেই দরিদ্র মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
জেলা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে কাপাসিয়া ইউনিয়ন। ইউনিয়নের অন্তর্গত কোচিং বাজার নৌঘাট। এখান থেকে তিস্তা নদীতে নৌকাযোগে প্রায় এক ঘণ্টার পথ। তারপর একই ইউনিয়নের বাদামেরচর গ্রাম। গত বুধবার সকালে বাদামেরচর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যারাকের ঘরগুলোর টিনের বেড়া ও চালা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে বেশি খারাপ টিনগুলো সরিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। কোনো কোনো ঘর হেলে পড়েছে। চালার টিন ফুটো হয়ে গেছে। যাঁদের ঘর পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, তাঁরা আত্মীয়স্বজন ও অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। বিশেষ করে এবারের শীতে বসবাসকারীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ব্যারাকে বসবাসকারী রেহেনা বেগম (৫৫) বলেন, মেরামতের অভাবে ঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। টিনের চালা ফুটো হয়েছে। বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর পানি পড়ে। পানিতে বিছানা ও আসবাব ভিজে যায়। এখন বৃষ্টি নেই। কিন্তু রাতে চালা দিয়ে কুয়াশা আসে। সরকার ব্যারাক সংস্কার করে দিচ্ছে না।
ফাতেমা বেগম (৫৮) বলেন, ‘সোরকার হামাক ঘর দিচে। সেগলাত থাকান যায় না। সোরকার হামারঘরোক নয়া করি ঘর তুলি দ্যাক।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের দরিদ্র গৃহহীন মানুষের বসবাসের জন্য ২০১০ সালে ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। মেঝে পাকা করে টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া হয়। এসব ব্যারাকে মোট ৪৬০টি পরিবার বসবাসের সুযোগ পায়। এর মধ্যে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর গ্রামের ৪৫টি পরিবার, কাজিয়ারচর গ্রামের ১৬০টি, ভাটি বুড়াইল গ্রামের ১৫০টি এবং হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের ১০৫টি পরিবার বসবাস করে। কিন্তু নির্মাণের ১৪ বছরেও এটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে ব্যারাকের ঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ওয়ালিফ মণ্ডল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। এরপর মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ আসেনি। তাই এগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। বিধ্বস্ত ঘরগুলো নতুনভাবে নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, ‘আমি নিজে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকগুলো পরিদর্শন করেছি। বসবাসের অনুপযোগী ব্যারাকগুলো নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবহিত করেছি।’