বাগমারায় ডোবা থেকে পাওয়া পাথরখণ্ডকে গুপ্তধন ভেবে হুলুস্থুল

রাজশাহীর বাগমারার ডুখোলপাড়া থেকে উদ্ধার হওয়া পাথরের খণ্ড। এটাকে গুপ্তধন বলে এলাকায় হুলুস্থুল পড়ে যায়
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাগমারায় একটি ডোবা থেকে পাওয়া একটি পাথরখণ্ড নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে গেছে। পাথরখণ্ডটিকে গুপ্তধন ভেবে তা পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। রাতভর একটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে কথিত গুপ্তধন উদ্ধার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে শেষ পর্যন্ত জানা গেছে উদ্ধার হওয়া বস্তুটি পিঁড়ি আকৃতির পাথরের একটি খণ্ড। বিষয়টি নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা।

গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের ডুখোলপাড়া গ্রামের পুরোনো একটি ডোবায় ছয়-সাত বছরের দুই শিশু মাছ ধরতে যায়। এ সময় রাব্বি হোসেন (৮) নামের এক শিশুর ডোবার কাছে একটি গর্তে চোখ পড়ে। গর্তে আংশিক বের হয়ে থাকা কালো রঙের একটি বস্তু দেখতে পেয়ে দুই শিশু তা তোলার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে রাব্বি তার মায়ের কাছে ঘটনাটি জানায়। পরে রাব্বির মা গোপনে এসে ওই বস্তুটি দেখে বাড়িতে ফিরে যান। সন্ধ্যার আগে তিনি সুযোগ বুঝে ওই ডোবার পাড়ের গর্ত থেকে বস্তুটি তুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় আশপাশের লোকজন তা দেখতে পেয়ে তাঁরাও বস্তুটির অংশ চান। তখন রাব্বির মা রিনা খাতুন তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিরোধ শুরু হয়। পাড়ার লোকজনও তা জেনে ফেলেন। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে রিনা খাতুন পাথরের বস্তুটি বাড়িতে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় ভাগনদী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তবে রিনা খাতুন অস্বীকার করায় তা উদ্ধার করতে না পেরে ফিরে যান পুলিশ সদস্যরা।

স্থানীয় ১০-১২ জন বাসিন্দা জানান, পুলিশ প্রথম দফায় কথিত গুপ্তধনটি উদ্ধার করতে না পারায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়। রিনা খাতুন গুপ্তধনটি সরিয়ে ফেলেছেন বা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন, এমন অভিযোগ তুলে তা রাষ্ট্রের কাছে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে বাড়ি ঘিরে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে রাত ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রিনা খাতুনের বাড়ি থেকে কালো পাথরের খণ্ডটি উদ্ধার করে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কেউ কেউ দাবি করছেন, আসল গুপ্তধনটি সরিয়ে ফেলে নকলটা পুলিশকে দিয়েছেন রিনা বেগম।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, ‘ডোবাটি অনেক পুরোনো। দেশ স্বাধীনের আগে সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস ছিল। এখন কোনো মানুষের বসবাস নেই। তাঁরা ওই স্থানকে হিন্দু পাড়া হিসেবে জানতেন। গত বছর ওই ডোবার কিছু অংশ সংস্কার করার সময় আগের লোকজনের ব্যবহার করা পুরোনো বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। তবে রিনা খাতুনের কথিত গুপ্তধন পাওয়া নিয়ে পাড়াতে উত্তেজনা ছিল। পুলিশ তা উদ্ধার করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই পাথরকে সবাই গুপ্তধন ও মূল্যবান মনে করেছিলেন। তাঁদেরও এমন মনে হয়েছিল।

ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা কথিত গুপ্তধনটি ১১ কেজি ওজনের পিঁড়ির আকৃতি পাথরের টুকরো। নকশা করা, শৌখিন পরিবারের বসার পিঁড়ির। কষ্টিপাথর বা গুপ্ত কোনো ধন না। এটা নিয়ে এলাকায় হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।