পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ
মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশসহ (বিজিপি) নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন।
সীমান্ত পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু সীমান্তে গোলযোগ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি মনে হলে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পুশব্যাক বা প্রত্যাবাসন যে আঙ্গিকে হোক, তাঁদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।’
প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমারের বিজিপিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের এখন সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্রীকরণ করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের আশ্রয় দেওয়া স্থান সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় সেখান থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য সুবিধাজনক ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের সরিয়ে নিলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে কোথায় কখন কী করতে হবে, তা জানতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘুমধুম সীমান্তে যান।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে মিয়ানমারের ২২৯ জন বিজিপি, সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন কর্মচারী, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বর্তমানে তাঁদের ঘুমধুম ও উখিয়ায় নিরস্ত্রীকরণ করে রাখা হয়েছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি থাকা প্রায় ১০টি পাড়ার কয়েক শ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে তিন দিন ধরে মাইকিং করা হচ্ছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও লোকজন সেখানে না গিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এরশাদুল হক বলেন, সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে তুমব্রুর কোনারপাড়া, মাঝেরপাড়া, ভাজাবনিয়া, চাকমা হেডম্যানপাড়া, তুমব্রু বাজারপাড়া, তুমব্রু পশ্চিমকুল, ঘুমধুম নোয়াপাড়া, পূর্ব পাড়া ও পশ্চিম পাড়া। পাড়ার সবাই যে যাঁর মতো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বা কয়েক দিনের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে সরে যাচ্ছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির মালামাল রক্ষার জন্য থেকে গেছেন।
এক সপ্তাহ ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখা-সংলগ্ন ওপারে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। ইতিমধ্যে সীমান্তের ওপারে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ঘুমধুমের জলপাইতলী গ্রামে একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।