টানা ১৩ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

গরমে স্বস্তি পেতে মাথায় পানি ঢালছেন মোখলেছুর রহমান। আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের মল্লিকপাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ জেলায় গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৩ দিন ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আসছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার উত্তরকালে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ ছাড়া গত বছরের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল এবং গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বশেষ রেকর্ড পর্যালোচনা করে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার এ চিত্র পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে ২০১৬ সালে ১১ ও ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০১৮ সালের ১৮ জুন ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, গত বছর (২০২২ সাল) ২৪ ও ২৫ এপ্রিল ওই বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবারও ৪১ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।

তবে সহসা স্বস্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, আগামী বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে। আজ জেলায় গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসে টানা ১৩ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। ২০০২ সাল থেকে এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রাসহ আবহাওয়ার রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। অতীতে কখনো একটানা এভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড এ জেলায় হয়নি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরের দেয়ালের ছায়া পেয়ে সেখানে জিরিয়ে নিচ্ছেন এক রিকশাচালক
ছবি: প্রথম আলো

গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ

তাপমাত্রা যদি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে তাকে বলা হয়, মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে তা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম তাপপ্রবাহ। এ হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

টানা কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় গরমে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। প্রাণিকুলেরও হাঁসফাঁস অবস্থা। মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী ইউনিয়নের পাটকেলপোতা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোখলেছুর রহমান আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়িতে পৌঁছানোর পর গরমে হাঁপিয়ে ওঠেন। গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে রেফ্রিজারেটর থেকে এক বোতল পানি বের করে মাথায় ঢালতে থাকেন। মোখলেছুর বলেন, ‘বাপরে বাপ, গরমে জান যায় যায় অবস্থা। আগে জানলি বাড়ি থেকে বের হতাম না।’

এদিকে তীব্র তাপমাত্রার কারণে খেটে খাওয়া মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। বিল্লাল হোসেন নামের এক বাসচালক বলেন, ‘গনগনা সূর্যু গাড়ির সামনের গ্লাচ তাতিয়ে তোলচে। সেই সঙ্গে রয়েচে ইঞ্জিনির গরম। রাস্তায় পিচ গলে পড়ায় গাড়ি সেভাবে চালানো যাচ্চে না। গাড়ি কনটোল করায় সমস্যা।’