প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে নেতাদের বাড়ি দখল, আরও ৩ দিনের রিমান্ডে ‘সমন্বয়ক’ মারইয়াম

সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখলের পর মারইয়াম মুকাদ্দাস। গত শনিবার টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায়ছবি: সংগৃহীত

নিজের পরিচিতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর ও দখলের উদ্যোগ নেন ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেওয়া মারইয়াম মুকাদ্দাস (মিষ্টি)। চার দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এমনই তথ্য পেয়েছে। তবে তিনি কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কি না, এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।

চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মারইয়াম মুকাদ্দাসকে টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম মাহবুব খাঁন তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে মারইয়ামের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন

গত ৬ ফেব্রুয়ারি কয়েকজন অনুসারী নিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেন মারইয়াম মুকাদ্দাস। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সদ্যপ্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম ও সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বাড়িগুলোতে লুটপাট করা হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘোষণা দেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর দখল করে বৃদ্ধাশ্রম, পাগলের আশ্রম, এতিমখানা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মারইয়াম মুকাদ্দাস।

গত ৮ মার্চ শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ির তালা ভেঙে দখলে নেন মারইয়াম। সেখানে ১৮ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষকে উঠিয়ে দিয়ে বাড়িতে ‘পাগলের আশ্রম’ চালুর ঘোষণা দেন। পরে রাতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বাড়িটি খালি করেন। পরে প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মারইয়াম। এ ঘটনায় ৯ মার্চ রাতে জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী বাদী হয়ে মারইয়ামের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

মারইয়াম মুকাদ্দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মারইয়াম টাঙ্গাইল শহরে একটি এনজিও করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তিনি তা ঠিকমতো চালাতে পারেননি। ২০২০ সালে এনজিওটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই ওই নেতাদের ওপর তাঁর ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভের কারণে নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত অন্য নেতারা বাড়ি ভাঙচুর ও দখল করে দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার পক্ষে ছিলেন না। মারইয়াম মুকাদ্দাস নিজের কয়েকজন অনুসারী নিয়ে ভাঙচুর ও দখলের উদ্যোগ নেন।

মারইয়াম মুকাদ্দাসের বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের যশিহাটী দোহার গ্রামে। ওই গ্রামের মাজহারুল ইসলামের মেয়ে তিনি। প্রতিবেশীরা জানান, মারইয়াম মুকাদ্দাস গ্রামে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। তারপর ঢাকায় চলে যায়।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানতে পেরেছেন, মারইয়াম ঢাকায় গিয়ে একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতকে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারেননি। মারইয়াম বিভিন্ন সময় সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতের কাশ্মীরসহ একাধিক দেশ সফর করেছেন। টাঙ্গাইলে এনজিও করতে ব্যর্থ হয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান। সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনেও গুরুত্ব পেতে শুরু করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মদ বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল, চাঁদা দাবির উদ্দেশ্য, বিদেশ গমনের কারণসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন