খুলনা-ঢাকা রুটে চালু হয়েছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। পদ্মা সেতু হয়ে প্রায় চার ঘণ্টায় ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। দূরত্ব, সময় ও ভাড়া কম হওয়ায় খুলনার যাত্রীরা এ ট্রেনে যাতায়াতে পছন্দ করছেন। নতুন রুটে ট্রেনে আসন বৃদ্ধি কিংবা আরও ট্রেন চালু করার দাবি তাঁদের। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও এই রুটে নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে।
এদিকে নতুন রুটে নতুন এই ট্রেন চালু হওয়ায় খুলনা–ঢাকার মধ্যে অন্য রুটের ট্রেনগুলোতে খুলনা আসন কমানো হয়েছে। ওই সব ট্রেনে সময় বেশি লাগায় যাত্রীদের সাড়া মিলছে কম।
গত মঙ্গলবার জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধনের দিন রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুলনা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় যান। ওই দিন রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানান, বিদেশ থেকে ট্রেনের নতুন ইঞ্জিন ও বগি আনা হচ্ছে। ছয় মাস পর এই রুটে নতুন আরও ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, সেবা ভালো থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে যাত্রীদের টিকিটের সংকট দেখা দিতে পারে। তাই অনলাইন বা সরাসরি যে উপায়েই টিকিট বিক্রি করা হোক না কেন, তা যেন কালোবাজারিদের কবলে না পড়ে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোপরি এই রুটে আরও ট্রেন ও কোচ বাড়ানো দরকার।
কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাসমালিক সিন্ডিকেটের কারণে ট্রেন সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। খুলনা-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস চলাচলেও একই অবস্থা যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে কমলাপুরে ট্রেনটির শেষ স্টেশন। এটা যদি বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত বাড়ানো যায়, তাহলে খুলনার মানুষের আরও বেশি উপকার হবে।
বর্তমানে খুলনা থেকে মোট চারটি ট্রেন ঢাকায় যায়। এর মধ্যে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটি আন্তনগর এবং নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন রয়েছে।
নতুন চালু হওয়া জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ১টি লাগেজ ভ্যানসহ (পণ্যবাহী) ১২টি কোচ রয়েছে। এতে ৪৮টি এসি সিট, ৩২০টি এসি চেয়ার, ৪০০টি শোভন চেয়ারসহ মোট ৭৬৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ আসন খুলনা থেকে ঢাকার জন্য বরাদ্দ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন চালু হওয়া জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ১টি লাগেজ ভ্যানসহ (পণ্যবাহী) ১২টি কোচ রয়েছে। এতে ৪৮টি এসি সিট, ৩২০টি এসি চেয়ার, ৪০০টি শোভন চেয়ারসহ মোট ৭৬৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ আসন খুলনা থেকে ঢাকার জন্য বরাদ্দ। খুলনা স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ২১৬টি শোভন চেয়ার, ২০০টি এসি চেয়ার এবং ৩২টি এসি সিট রয়েছে।
খুলনা থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে খুলনা আসার পথে নওয়াপাড়া, সিংগিয়া, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা জংশন—এই ছয়টি স্টেশনে ট্রেনটি থামে। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয় দিন ট্রেনটি চলাচল করবে।
জাহানাবাদ এক্সপ্রেসে খুলনা থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৪৪৫ টাকা, এসি চেয়ার ৭৪০ টাকা, এসি সিট ৮৮৫ টাকা, এসি বার্থ ১ হাজার ৩৩০ টাকা। খুলনা থেকে নওয়াপাড়া শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০০ টাকা, এসি সিট ১১০ টাকা, এসি বার্থ ১৩০ টাকা। খুলনা থেকে সিংগিয়া শোভন চেয়ারের ৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০০ টাকা, এসি সিট ১১০ টাকা, এসি বার্থ ১৫০ টাকা।
খুলনা থেকে নড়াইল শোভন চেয়ার ভাড়া ৭৫ টাকা, এসি চেয়ার ১২৫ টাকা, এসি সিট ১৫০ টাকা, এসি বার্থ ২২৫ টাকা। খুলনা থেকে লোহাগড়া শোভন শ্রেণির ভাড়া ৯৫ টাকা, এসি চেয়ার ১৫৫ টাকা, এসি সিট ১৮৫ টাকা, এসি বার্থ ২৮০ টাকা। খুলনা থেকে কাশিয়ানী জংশন শোভন চেয়ার ভাড়া ১৪৫ টাকা, এসি চেয়ার ২৩৫ টাকা, এসি সিট ২৯০ টাকা, এসি বার্থ ৪২৫ টাকা। খুলনা থেকে ভাঙ্গা জংশন শোভন চেয়ার ভাড়া ১৮৫ টাকা, এসি চেয়ার ৩০৫ টাকা, এসি সিট ৩৭০ টাকা, এসি বার্থ ৫৫৫ টাকা।
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোর ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রা শুরু করছে। ৬টা ৩৩ মিনিটে এটি নওয়াপাড়ায়, ৬টা ৫১ মিনিটে সিংগিয়ায়, ৭টা ১৩ মিনিটে নড়াইল স্টেশনে, ৭টা ২৯ মিনিটে লোহাগড়া, ৭টা ৪১ মিনিটে কাশিয়ানী জংশনে এবং ৮টা ১৩ মিনিটে ভাঙ্গা জংশনে পৌঁছে। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা পৌঁছানোর কথা।
ট্রেনটি আবার রাত ৮টায় ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছাড়ে। এটা রাত ৯টা ৩ মিনিটে ভাঙ্গা জংশনে, ৯টা ৩৪ মিনিটে কাশিয়ানী জংশনে, ৯টা ৪৮ মিনিটে লোহাগড়ায়, রাত ১০টা ৩ মিনিটে নড়াইল স্টেশনে, ১০টা ৩৪ মিনিটে সিংগিয়া, ১০টা ৫৪ মিনিটে নওয়াপাড়া এবং ১১টা ৪৫ মিনিটে খুলনা স্টেশনে পৌঁছানোর সময়সূচি রয়েছে।
খুলনা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে যশোর-কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যায়। পথে ১২টি স্টেশনে ট্রেনটি থামে। এতে খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া শোভন চেয়ার শ্রেণি ৬২৫ টাকা, এসি চেয়ার ১ হাজার ১৯৬ টাকা, এসি বার্থ ২ হাজার ১৫১ টাকা। ট্রেনটিতে খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার আসন কমেছে। সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা থেকে ঢাকার জন্য ৭০টি শোভন চেয়ার, ২৫টি এসি চেয়ার ও ১৮টি এসি বার্থ রয়েছে। ট্রেনটি খুলনা থেকে ছাড়ে রাত পৌনে ১০টায় আর ঢাকায় পৌঁছায় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। এটি ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে সকাল ৮টায় ছেড়ে খুলনা পৌঁছায় বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে।
নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি পাঁচটি বগি নিয়ে প্রতিদিন রাত ১১টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যায়। পোড়াদহ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে গেন্ডারিয়া হয়ে ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার এটি সকাল ১০টায় ছাড়ে। রাত ৮টায় খুলনা স্টেশনে পৌঁছায়। ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথে ট্রেনটি ১৩টি স্টেশনে দাঁড়ায়।
দূরত্ব কম হওয়া, সময় কম লাগা এবং ভাড়া কম হওয়ায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না। তবে খুলনা–ঢাকার অন্য রুটের ট্রেনে খুলনার যাত্রীদের আগ্রহ কিছুটা বলে মনে হচ্ছে।আশিক আহমেদ, খুলনা রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার
চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন রোববার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয় দিন সকাল নয়টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি যশোর-ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী-বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত যায়। চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায় বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে। এটি আবার ঢাকা থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট। খুলনা পৌঁছায় ভোর ৫টায়। ট্রেনটিতে খুলনা থেকে ঢাকার জন্য ৬০টি শোভন চেয়ার, ২৪টি এসি সিট এবং ৩০টি এসি চেয়ার আসন রয়েছে। চিত্রা ট্রেনের ভাড়া শোভন চেয়ার শ্রেণি ৬৩০ টাকা, এসি চেয়ার ১ হাজার ২০৮ টাকা এবং এসি সিট ১ হাজার ৪৪৯ টাকা।
খুলনা রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার আশিক আহমেদ বলেন, দূরত্ব কম হওয়া, সময় কম লাগা এবং ভাড়া কম হওয়ায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না। তবে খুলনা–ঢাকার অন্য রুটের ট্রেনে খুলনার যাত্রীদের আগ্রহ কিছুটা বলে মনে হচ্ছে।