কয়রায় মাছের ঘেরে তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন ১০ কৃষক
খুলনার কয়রা উপজেলায় মাছের ঘেরে একই সঙ্গে মাছ চাষ ও তরমুজের আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন ১০ কৃষক। কম খরচে বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। এমন সাফল্য দেখে স্থানীয় অনেক কৃষকই মাছের ঘেরে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
উপজেলার মহারাজপুর এলাকার তরমুজচাষি ইয়কুব মোল্ল্যা বলেন, গত মে মাসের শেষ দিকে তাঁর দেড় বিঘা মৎস্যঘেরের পাড়ে ২০০টি তরমুজের চারা রোপণ করেছিলেন। তরমুজগাছের বয়স তিন মাস পেরিয়েছে। রোগবালাই হয়নি, ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তরমুজের ওজন ৪ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। ১২ হাজার টাকা খরচ করে এরই মধ্যে ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষি গবেষণা বিভাগ ও কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে আগেই। তবে এবার অসময়ে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে ১০ জন কৃষক মাচান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু তরমুজের আবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন। কৃষকদের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, উপজেলায় ১০ জন কৃষক এবার মৎস্যঘেরের পাড়ে প্রথমবারের মতো অসময়ে তরমুজের আবাদ করে সফল হয়েছেন। এ সফলতায় উপজেলায় অসময়ে তরমুজ চাষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। অসময়ে তরমুজের চাহিদা থাকায় ও দাম ভালো পাওয়ায় মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
২৭ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মহারাজপুর ও বাগালী ইউনিয়নের কয়েকটি মৎস্যঘেরের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচার নিচে সারি সারি তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তরমুজের গায়ে ডোরাকাটা দাগ ও রং কালচে-সবুজ।
মহারাজপুর এলাকার তরমুজচাষি রাসেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ হলেও এই প্রথম অসময়ে তরমুজ চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ অসময়ে তরমুজের চাষ দেখতে আসছে। দেখার পর তারা জানতে চাচ্ছে, আমরা কীভাবে এটা পেলাম, কীভাবে রোপণ করলাম, কীভাবে যত্ন নিলাম? আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। তারাও এই তরমুজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
বাগালী ইউনিয়নের উলার বিল ও বগার বিলের ২০ বিঘা মৎস্যঘেরের ওপর মাচা তৈরি করে অসময়ে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করেছেন মোশাররফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও সাবিনা খাতুনসহ কয়েকজন কৃষক। তাঁদের ঘেরের মধ্যে মাচায় জাল দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে ঝুলছে সবুজ-ডোরাকাটা রসাল তরমুজ।
তরমুজচাষিদের ভাষ্য, সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় তরমুজের বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ পেয়েছেন তাঁরা। বারি তরমুজ-২–এর ভেতরের অংশের রং হলুদ। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। আবাদে খরচ কম। বাজারদরও বেশ চড়া থাকায় খুশি তাঁরা।
খুলনা জেলা সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুনর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে অসময়ে চাষের জন্য বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ নিয়ে গবেষণা করে কয়রা উপজেলায় পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য এসেছে। এই তরমুজ সারা বছরই চাষ করা যায়। এতে কম পরিশ্রমে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। রোগবালাই যেমন কম, তেমনি পোকার উপদ্রবও কম। রোপণের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি করা যায়।
এখন অসময়ে তরমুজ চাষের মতো লাভজনক ফসল আর নেই বলে জানালেন কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এবার যাঁরা তরমুজ চাষ করেছেন, তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে আগামী বছর তরমুজ চাষের পরিকল্পনা করছেন। মাছের ঘেরের পাড়ে ৪০০ তরমুজের চারা লাগালে প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০টি তরমুজ পাওয়া যায়। জাতভেদে প্রতি তরমুজের ওজন ৪-৮ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৪০০টি তরমুজগাছ থেকে প্রায় ছয় হাজার কেজি তরমুজ পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি তরমুজ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কমপক্ষে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। ৪০০ তরমুজগাছের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ হাজার টাকা।