খননযন্ত্রের আঘাতে ফেটেছে ওয়াসার পাইপ, চট্টগ্রামের ৩০ এলাকায় পানি নেই

চট্টগ্রাম ওয়াসার ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ লাইন মেরামতের কাজ চলছে। আজ বুধবার সকাল ১০ টায় কুয়াইশ এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ফুটো হয়ে গেছে ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন। গত সোমবার দুপুরে নগরের কুয়াইশ এলাকায় মাটি খোঁড়ার যন্ত্রের (এক্সকাভেটর) আঘাতে পাইপ ফেটে যায়। এর পর থেকে নগরের অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের আওতায় কুয়াইশ এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছিল। এতে এক্সকাভেটর ব্যবহার করা হয়। সেই এক্সকাভেটরের আঘাতে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপ ফুটো হয়ে গেছে। এ কারণে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ কাজ করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাইপলাইনের অবস্থান ও নকশা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কুয়াইশ এলাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়ে পাইপের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এখন মাটি খনন করে পাইপটি মেরামত করতে হচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ওয়াসা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে।

পানির সংকটে ভোগান্তি

ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে মোট ২৮ কোটি লিটার পানি। এর বাইরে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যায়। এ ছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন–সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। বর্তমানে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার বন্ধ। তাই ১৪ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরের উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখানবাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনিয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকাননসহ অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নগরে এমনিতেই পানির সংকট; সব এলাকায় ওয়াসার পানি পৌঁছায় না। কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর থেকে এক ফোঁটা পানিও মিলছে না। এ কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন তাঁরা। সোমবার দুপুর থেকেই ভোগান্তি শুরু। কেনা পানিতে রান্না করতে হচ্ছে। একই এলাকার গৃহিণী সালমা আক্তার বলেন, ঘরে পানি জমানো ছিল না। হুট করে পানি চলে যাওয়ায় বিপদে পড়তে হয়েছে।