‘কম্বলডা পায়া খুব উপকার হইলো’
‘হামেরা (আমরা) গুচ্ছগ্রামোত রহচি বাপু। চাইর দিকে নদী। ঘরের টিনলা পুরাতন হয় কানা (ফুটা) হইচে। বর্ষার সময় পানি (বৃষ্টি) আসিলে ঘুমাবা পারি না। জারের (শীতের) সময় কুয়াশা আর বাতাস ঢুকেচে। কম্বলডা দিয়া ভালয় উপকার করলেন। জারখানোত তুমার কম্বলডা ঢাকা নিবা পারিম।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত রাজারপাঠ ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬২)।
প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন আমেনা বেগমের। এরপর মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন তিনি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে থাকেন আশ্রয়ণের অন্য ঘরে। এখন বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন আমেনা। থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুরোনো টিনের ঘরে।
শনিবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বইছে হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাস। দিনের বেলা হালকা রোদে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও সন্ধ্যা হতে না হতেই তীব্র শীতে কাবু হয়ে হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুয়াশা ভেদ করে মিষ্টি রোদের দেখা মেলার পরপরই পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের রাজারপাঠ ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে চাওয়াই নদের ধারে ঈদগাহে জড়ো হয়েছেন নানা বয়সী দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ।
এর আগে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল নিয়ে সেখানে হাজির হন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। রাজারপাঠ ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়াও এর পাশের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী (সাঁওতাল) সম্প্রদায়ের ২১ জন নারী-পুরুষসহ আশপাশের গ্রাম থেকে আসা মোট ১৬০ জন অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষকে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় রাজারপাঠ ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়াও পাশের এলাকায় ঘুরে দুস্থ ও অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেন এবং একটি করে টোকেন (স্লিপ) দেন।
কম্বল বিতরণের সময় ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাহারুল হক, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রায়হান শরীফসহ প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বন্ধুসভার সদস্যরা জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পত্রিকা সরবরাহকারীসহ (হকার) গরিব ও দুস্থ শীতার্তদের মাঝে আরও ৪০টি কম্বল বিতরণ করেন। এভাবে শনিবার দিনভর প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ২০০টি কম্বল বিতরণ করেন পঞ্চগড় বন্ধুসভার সদস্যরা।
কম্বল পেয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ফুলমণি বেছেরা (৪৮) বলেন, ‘এই কনকনে ঠান্ডায় হামার (আমাদের) খবর নেওয়ার লোক নাই বাপু। এই যে কম্বল নিয়া আইছেন এতেই হামরা খুশি। কম্বলডা পায়া খুব উপকার হইলো।’
৬২ বছর বয়সী আকবর আলী লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছিলেন। ১১ বছর বয়সে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বা পা অচল হয়েছিল তাঁর। এখন বাস করেন রাজারপাঠ ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। অনেক কষ্টে সংসার চালান তিনি। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘ঠান্ডার দিন আসিলে মুই আরও বেশি অসুস্থ হয়া যাছু। পায়ের ব্যথায় বেড়ানেড়া (হাঁটাহাঁটি) করিবা পারুনা। বেলাডা ডুবিলে খুপে ঠান্ডা করছে। কম্বলডা দিলেন, মুই অসুখের লোকটা ঢাকা নিবা পারিম।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৫৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। এ পর্যন্ত বিকাশের মাধ্যমে অনুদান এসেছে ৪৩ হাজার ২০০ টাকা।