মুন্সিগঞ্জে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, থানা ফটকে বিক্ষোভ

নিখোঁজ সাইফুল ইসলামের সন্ধানে আয়োজিত মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানী ঢাকার ওয়ারীর বাড়ি থেকে মুন্সিগঞ্জে এসে নিখোঁজ হওয়া যুবক মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে লিখনের সন্ধান চেয়ে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও সদর থানা ফটকে বিক্ষোভ করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে নিখোঁজ সাইফুলকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নিখোঁজ সাইফুল রাজধানী ঢাকার ওয়ারীতে পরিবারের সঙ্গে থাকলেও তাঁর পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া এলাকায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ শহরের দক্ষিণ ইসলামপুরের বাসিন্দা ও বন্ধু সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে এসে নিখোঁজ হন সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। সাইফুলের সন্ধান না পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাদ্দাম হোসেনসহ ছয় বন্ধুর নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা করা হয়।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে কামারখাড়া ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন শুরু হয়। মানববন্ধনে নিখোঁজ সাইফুলের স্বজনেরাসহ কয়েক শতাধিক নারী–পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে নিখোঁজ সাইফুলের সন্ধান চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেওয়া হয়। মানববন্ধনে স্বজনেরা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিখোঁজ সাইফুলের বাবা মো. দুলাল হাওলাদার বলেন, সাইফুলের সঙ্গে ওর বন্ধু সাদ্দাম, রবিন, তপু, ইলিয়াস, আশরাফুলদের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। প্রায় সময় সাইফুল মুন্সিগঞ্জে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে থাকতেন। ৬ ফেব্রুয়ারি সাদ্দামের দাওয়াতে সাদ্দামদের বাড়িতে আসেন সাইফুল। ওই দিন রাত আটটার পর থেকে সাইফুল নিখোঁজ হন। তিনি বলেন, ‘২৩ দিন ধরে ছেলেটা নিখোঁজ। ছেলের সন্ধানে ডায়েরি করেছি, মামলা করেছি। পুলিশের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও ছেলের হদিস পাচ্ছি না।’

মানববন্ধনে ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সাইফুলের বড় বোন ফাতেমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমরা মানববন্ধন করেছি। সন্দেহভাজনদের নামও পুলিশকে বলেছি। পুলিশ আসামিদের ধরা তো দূরে থাক, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। মামলার তদন্তভার যাঁকে দেওয়া হয়েছে, শুনেছি সেই এসআইও সন্দেহভাজন সাদ্দামের বন্ধু।’

মানববন্ধন শেষে দুপুর ১২টায় মুন্সিগঞ্জ থানা ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন নিখোঁজ সাইফুলের স্বজনেরা। সেখানে পুলিশকে কটাক্ষ করে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। সাইফুলকে খুঁজে বের করতে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়, তা না হলে আবারও থানা ঘেরাও কর্মসূচি করবেন বলে জানান স্বজনেরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাদ্দামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি।

আশরাফুল ইসলামের মুঠোফোনের সংযোগও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রবিন খন্দকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর দাদার মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। সেদিন তাঁদের বাড়িতে সাদ্দামের সঙ্গে এসেছিলেন সাইফুল। সেখান থেকে দুপুরে সাদ্দামদের সঙ্গে বের হয়ে যান। সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাদ্দামদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আশরাফুলের মা, মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখান থেকে নিখোঁজ হন সাইফুল।
রবিন খন্দকার বলেন, ‘সাইফুলের সবশেষ আশরাফুলের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। সেখান থেকেই সে নিখোঁজ হয়। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, কাউকে সন্দেহ করার থাকে, সেটি আশরাফুল ও তার পরিবারকে করা উচিত। আমাদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, তাঁর থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সাইফুলের খোঁজে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুতই নিখোঁজ ব্যক্তির হদিস পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ‘আমরা নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্তে এ ঘটনায় যাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।’