মাদারীপুরে শিশু পরিবারে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ, ৩ কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি

মাদারীপুরে সরকারি শিশু পরিবারের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন নিবাসীা ছাত্ররা। আজ রোববার দুপুরে শহরের মধ্য খাগদী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে ছাত্ররা। এ সময় তারা তিন কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি জানায়।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শহরের মধ্য খাগদী এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির উপতত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে।

আবাসিক ছাত্ররা জানায়, শিশু পরিবারে দৈনিক খাবার তালিকায় যে খাবার সরবরাহের কথা, তা থাকে না। বিপরীতে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। বিশেষ করে পচা মাছ খাওয়ানো হয়। গরু বা খাসির মাংস খাবার তালিকায় থাকলেও বিশেষ দিন ছাড়া সেগুলো রান্না করা হয় না। এ ছাড়া প্রতিদিন মোটা চাল ও পানির মতো পাতলা ডাল রান্না করে দেওয়া হয়। খাবার নিয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা শিশুদের জন্য সরবরাহ করা মালামাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ও শিক্ষক হাবিবুর রহমান, ফজলুল হক ব্যাপারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আখি খানের পদত্যাগ ও বিচারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা।

সরকারি শিশু পরিবারে ১০০ ছাত্র ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২৭। এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশু ইয়াসিন মাতুব্বর (৭)। খাবার নিয়ে জানতে চাইলে এই শিশু বলে, ‘স্যাররা ঠিকমতো খাবার দেয় না। পচা মাছ পাতে দেয়। বড় অফিসার যেদিন এখানে ঘুরতে আসে, সেদিন আমাগো ভালো খাবার খাওয়ায়।’

অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশুশিক্ষার্থী এনামুল মুনশি (১৩) বলে, ‘খাবার তালিকায় রুই ও কাতলা মাছ থাকলেও আমাগো দেয় পাঙাশ মাছ। তা–ও বেশির ভাগ সময় থাকে পচা। কিছু কইলেই আখি ম্যাডাম আর হাবিব স্যারে খালি আমাগো মারে। তারা থাকলে আমরা এখানে আর থাকব না।’

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে সরকারি শিশু পরিবারের ভেতরে প্রবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি দল। এ সময় শিশু পরিবারের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় লোকজনও শিশু পরিবারের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা প্রতিষ্ঠানটির উপতত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু পরিবারের যারা থাকে, তারা এতিম। তাদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা। অথচ এখানে যারা থাকে, তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এখানে একজন সহকারী চিকিৎসক রয়েছেন, অথচ তিনি সব সময় অনুপস্থিত। কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। ভালো খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। এতিম শিশুশিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমন অবহেলা? আমরা অনিয়মের চিত্রগুলো উপতত্ত্বাবধায়কের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি নিজেও তাঁর দায় স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছেন। আমাদের দাবি, শিশু পরিবারে থাকা এতিম শিশুদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) উপতত্ত্বাবধায়ক মো. সাইদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে ১৭টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১১ জন রয়েছেন। ছাত্ররা যাঁদের অনিয়মের কথা বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে এর আগেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এখানে কিছু ব্যত্যয় রয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে আমরা কাজ করছি। খাবার নিয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আসলে সঠিক নয়। খাবার তালিকায় যে খাবার দেওয়া কথা রয়েছে, ঠিকাদার নিয়মিত সেই খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছে। এরপরও ছাত্ররা আমার কাছে যেসব অনিয়মের অভিযোগের কথা জানিয়েছে, সেগুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।’