এক গাছে দুই বছরে ১৫ মণ বেগুন

গাছ থেকে বেগুন সংগ্রহ করছেন কৃষক আমির আলী। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুটিমারি গ্রামের
ছবি: প্রথম আলো

বসতভিটাসংলগ্ন জমিতে একটি বেগুনগাছ। লম্বায় প্রায় ১৩ হাত। বারোমাসি সেই গাছে প্রতি মাসে ২৫-২৮ কেজি বেগুন হচ্ছে। উন্নত জাতের এ বেগুনগাছ থেকে দুই বছরে ১৫ মণ বেগুন তুলেছেন গাইবান্ধার পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমির আলী। এ সময়ে ১২ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন তিনি।

স্থানীয়ভাবে এটি বারোমাসি বেগুন নামে পরিচিত বলে জানিয়েছেন আমির আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর আগে গাছটি লাগিয়েছেন। এ জাতের গাছ থেকে মোট ২৫ মাস বেগুন পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত ২৪ মাস (দুই বছর) বেগুন পাওয়া গেছে। আরও এক মাস ফলন পাওয়া যাবে।

প্রতি মাসে গড়ে ২৫ কেজি হিসাবে গত দুই বছরে ১৫ মণ বেগুন হয়েছে জানিয়ে আমির আলী বলেন, প্রতি কেজি গড়ে ২০ টাকা হিসাবে এক গাছ থেকে মোট ১২ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন।

পরিচর্যা করলে একটি বেগুনগাছ থেকে দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমির আলী একজন আদর্শ কৃষক। তিনি পরিশ্রম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি আমির আলীর ফসলের খেতে গিয়ে দেখা গেছে, বেগুন সংগ্রহ ও পরিচর্যার কাজ করছেন তিনি। বসতভিটায় লেবু, আখ ও পেঁপের গাছ লাগিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি।

আমির আলীর (৫২) বাড়ি সাঘাটা উপজেলার পুটিমারী গ্রামে। আগে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। কখনো কখনো ফেরি করে সবজি বিক্রি করতেন। তখন অভাবে দিন কাটত। একপর্যায়ে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাঁচ শতক জমিতে সবজির চাষ শুরু করেন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে একই জমিতে একাধিক ফসল ফলাতে থাকেন। এভাবে ৩০ বছর ধরে ফসল ফলিয়ে এখন স্বাবলম্বী কৃষক তিনি।

আমির আলীর একমাত্র ছেলে আয়নুল হক পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করেন। বড় মেয়ে লিপি আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে আরিফা জান্নাত স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। এখন স্ত্রী করিমন নেছা ও ছোট মেয়েকে নিয়ে তিন সদস্যের সংসার তাঁর।

চাষাবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তা নেন জানিয়ে আমির আলী প্রথম আলোকে বলেন, ৯০ শতাংশ জৈব সার ব্যবহার করে জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন। দেশের কৃষকেরা যাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করেন, সে লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন।

পুটিমারী গ্রামের পরিমল চন্দ্র বলেন, একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন আমির আলী। এখন তাঁর জমিতে অনেক দিনমজুর কাজ করেন। এক জমিতে একাধিক ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। গ্রামের কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন।