কোটা আন্দোলন: রংপুরে সংঘর্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে আজ মঙ্গলবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। বাবার নাম মকবুল হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম।
আজ বেলা দুইটার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে রংপুর শহর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। বেলা দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ছিলেন পার্ক মোড়ের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ আহত হন। আহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই মারা যান বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ জনের মতো রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। অন্যরা অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।
শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীরাও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়ে। এভাবে ত্রিমুখী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালীন বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের অবস্থান, অন্যদিকে পার্ক মোড়ের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীরাও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়ে। এভাবে ত্রিমুখী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের সদস্য নিহত আবু সাঈদের বন্ধু অঞ্জন রায় বলেন, শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় সংঘর্ষ চলছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কতটি রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আবু সাঈদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। তবে সাঈদ কী কারণে মারা গেছেন, চিকিৎসকেরা তা বলতে পারবেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, মেডিকেলের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু রাবার বুলেটের আঘাতে মারা গেছেন কি না, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।