আগুনে পুড়েছে সুন্দরবনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের প্রায় আট একর বনভূমি

পুড়ে যাওয়া বনের অনেক গাছের নিচের অংশে এখন কেবলই ছাঁইয়ের স্তূপ। মঙ্গলবার সুন্দরবনের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির তেইছের ছিলায়ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনের ধানসাগর ক্যাম্পের আওতাধীন বনাঞ্চলে আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে। সেখানে আগুন না থাকলেও মঙ্গলবার দুপুরের পরও কয়েকটি স্থানে ধোঁয়া দেখা যায়। তাই ফায়ার আউট ঘোষণা করা হয়নি। পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ।

রোববার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্ট এলাকায় আগুনের সূত্রপাত।

স্থানীয়ভাবে এলাকাটি তেইশের ছিলা ও শাপলার বিল হিসেবে পরিচিত। শুরু থেকে পানির অভাবে সেখানে আগুন নেভানোর কাজে বেগ পেতে হয় বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে। তবে আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের নিয়ে দ্রুত ফায়ার লাইন কাটা শুরু করে বন বিভাগ। আর নদীতে জোয়ার এলে পাম্প বসিয়ে রোববার রাত থেকে শুরু হয় পানি ছিটানো।

ভাটায় পানি না থায় প্রতিদিনই প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা পানি ছিটানো যায়নি বনে। তবে যখনই পানি পাওয়া গেছে, সারাক্ষণ পাম্প চালিয়ে নদী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের দুর্গম বনে তা নিয়ে আগুন নেভাতে কাজ করে গেছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। এভাবে মঙ্গলবার সকালে আগুন নেভানো সম্ভব হয়। তবে এখনো ফায়ার আউট ঘোষণা করা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবু বক্কর জামান বলেন, ‘সব জায়গায় পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ধোঁয়া দেখতে পাওয়ায় আজও সারা দিন আমরা আগুনের এলাকাটি পর্যবেক্ষণে রাখি। রাতেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ চলবে।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি এবং বন বিভাগের আশপাশের ২০টি অফিসের লোকজন যোগ দেন। তবে কোথাও আর স্পষ্ট আগুন না থাকায় সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা কমাতে থাকে কর্তৃপক্ষ। সকালেই ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সারা দিন ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট থাকলেও মঙ্গলবার রাতে কাজ করবে দুটি ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার বলেন, বনের আগুনের ধরন একটু ভিন্ন। এখানে শুকনো পাতার পুরু আস্তরণ থাকে। ওপরে ভিজিয়ে দিলেও কখনো কখনো নিচে আগুন থাকতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ জন্যই দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ।

পুড়ে গেছে প্রায় ৮ একর বন

সুন্দরবনের তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন লাগার এক দিন আগে শনিবার সকালে পাশের কলমতেজী বন টহল ফাঁড়ির আওতাধীন স্থানীয়ভাবে টেপার বিল হিসেবে পরিচিত এলাকায় আগুন লাগে। দিনরাত কাজ করে রোববার ওই আগুন যখন প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তখনই ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার সময় ধরা পড়ে পাশের তেইশের ছিলায় নতুন করে লাগা আগুন।

বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে আগুন লাগা পাশাপাশি দুটি এলাকাই বনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের আওতাধীন। কলতেজী ও ধানসাগর—দুই এলাকাতেই চার একরের মতো বনভূমি পুড়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, আগুনে ওই এলাকার ১০ একরের বেশি বনাঞ্চল পুড়ে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বিকেলেও দুই এক জায়গায় ধোঁয়া মিলেছে। যার কারণে আজও রাতে আমরা পানি ছিটাব। বুধবার সকালেও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর পরে নির্ধারণ করা হবে কখন ফায়ার আউট ঘোষণা করা হবে।’

আগুনে বনের কী পরিমাণ এলাকা পুড়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে নিশ্চিত করে বলা যাবে জানান নূরুল করিম। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা, কলমতেজী এলাকায় তিন থেকে চার একর এবং ধানসাগর এলাকায় চার একরের মতো পুড়ে থাকতে পারে। ফায়ার আউট ঘোষণার পর তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।

দুটি আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) দীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনে পোড়া বনে প্রধানত বলাগাছই বেশি। অল্প কিছু সুন্দরী ও বাইনগাছ ছাড়া বলা বা বলই আর লতাগুল্মজাতীয় গাছই বেশি দেখা যায়। আগুনে এসব গাছের প্রায় সবই শুকিয়ে গেছে। বলাগাছ থেকে এরই মধ্যে পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। গোড়া পুড়ে যাওয়াতে বাইন, সুন্দরীর মতো বড়গুলোও একটু বাতাসে বা বৃষ্টিতে হেলে পড়তে পারে, বলছে বন বিভাগের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।

বন বিভাগের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার সকালে পুরো এলাকার কোথাও আগুনের চিহ্ন ছিল না। দুপুরের আগে নতুন করে কয়েকটি স্থানে ছোট ছোট ধোঁয়া দেখা যায়। তাই আরও দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ চলবে