ছেলের হাতে খুন হন জয়পুরহাটের পুকুর পাহারাদার রজ্জব আলী, আদালতে জবানবন্দি

জয়পুরহাটে বাবা রজ্জব আলী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছেলে শাহীন মন্ডল
ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটের কালাইয়ে পুকুরের পাহারাদার রজ্জব আলীর (৬০) মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। তিনি পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যাননি। ছেলে শাহীন মণ্ডল তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। শাহীন মণ্ডল তাঁর বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহত রজ্জব আলী কালাই উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পাশের বলিগ্রামে সাখাওয়াত হোসেনের পুকুরের পাহারাদার ছিলেন। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সকালে বলিগ্রামের ওই পুকুরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। স্বজনেরা তাঁর লাশ বাড়িতে এনে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ রজ্জবের লাশ উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল পাঠায়। এ ঘটনায় থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বৃদ্ধ রজ্জব আলীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রজ্জব আলীর মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনাজনিত নয় বলে উল্লেখ করা হয়। ইউডি মামলার বাদীকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জানানো হয়। এ ঘটনায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি কালাই থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিহত ব্যক্তির ছেলে শাহীন মণ্ডলকে শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল শুক্রবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শাহীন মণ্ডলকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি বাবা রজ্জব আলীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শাহীন মণ্ডল এলাকায় চুরি করতেন। এ কারণে তাঁকে রজ্জব আলী মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ১৫ থেকে ১৬ বছর শাহীন মণ্ডল বাড়িছাড়া ছিলেন। এতে শাহীন মণ্ডল তাঁর বাবা রজ্জব আলীর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। শাহীন মণ্ডল তাঁর বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ২১ ডিসেম্বর রাতে পুকুর পাহারারত রজ্জব আলীকে হত্যা করেন শাহীন মণ্ডল। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে লাশটি পুকুরে পানিতে ফেলে দেন। পরদিন সকালে রজ্জব আলীর লাশটি উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে নিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর রহস্য উঠে আসে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালাই থানার উপপরিদর্শক আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, রজ্জব আলী পুকুরপাড়ে যেখানে থাকতেন, সেখান থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরত্বে মাটিতে রক্ত ছিল। তাঁর কানে, কপালে ও ঘাড়ে ক্ষত চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ কারণে রজ্জব আলীর মৃত্যু নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকায় বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর সত্য ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।