রায়পুরায় টেঁটাযুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের ৩৬ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধে দুজন নিহতের ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি। এমনকি শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়েও কেউ থানায় আসেননি বলে জানিয়েছেন রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ।
গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল মোহিনীপুর গ্রামে এই টেঁটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুজন নিহতের পাশাপাশি উভয় পক্ষের আরও অন্তত পাঁচজন আহত হন।
নিহত দুজন হলেন ওই গ্রামের মো. খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (২৩) এবং আবদুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া (৩৫)। মাত্র তিন মাস আগে সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন নিহত আমিন মিয়া।
নিহত দুজনের স্বজনেরা জানান, শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরো এলাকা পুরুষশূন্য। গতকাল রাতের মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেও মর্গ থেকে দুজনের লাশ এলাকায় আনা হয় আজ সকালে। এরই মধ্যে একজনের লাশ দাফন করা হয়েছে, আরেকজনের লাশ এখনো দাফন সম্ভব হয়নি। পুলিশের সঙ্গে মামলা বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মামলা করতে থানায় যাবেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহিনীপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম পক্ষের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রায়ই দুপক্ষের অনুসারীরা টেঁটাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ৬ মাস আগে টেঁটাযুদ্ধে আবদুস সালামের অনুসারীরা হেরে গিয়ে এলাকা ছাড়েন। ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁরা এলাকায় ফিরছিলেন। তাঁদের বাধা দেন ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার লোকজন। এ সময় দুপক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র এবং টেঁটা-বল্লম নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আবদুস সালাম পক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি সদস্য সামসু মিয়া ওই ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি। তাঁরা দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা হলেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাঁদের দ্বন্দ্ব বংশগত। এর মধ্যে বড়বাড়ি বংশের নেতৃত্ব দেন বীর আবদুস সালাম ও জান মাহমুদের বাড়ি বংশের নেতৃত্ব দেন সামসু মিয়া।
আবদুস সালাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা করার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। দ্রুতই লিখিত অভিযোগ নিয়ে রায়পুরা থানায় যাবেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ঘটনার পর থেকে উধাও ইউপি সদস্য সামসু মিয়া। তাঁর মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, আজ ইফতারের আগপর্যন্ত নিহত একজনের লাশ দাফন বাকি ছিল। দাফন শেষ করে তাঁরা মামলা করতে থানায় আসবেন জানিয়েছেন। পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে যাওয়ায় এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। পুলিশের অভিযান চলছে।