শরীয়তপুরের মাদ্রাসা থেকে শিশু অপহরণ, সিসিটিভিতে ধরা পড়ল দৃশ্য

শিশু আয়েশাকে অপহরণের দৃশ্য মাদ্রাসা ও পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরের চরপালং এলাকায়
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শরীয়তপুর জেলা শহরের চরপালং এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে আয়েশা আক্তার (৬) নামের এক শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ওই শিশুকে এক তরুণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। ওই শিশু স্থানীয় দারুল উলুম ফোরকানিয়া কওমি মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিশুশ্রেণির ছাত্রী। সে চরপালং এলাকার জাকির তালুকদার ও ফারজানা আক্তার দম্পতির মেয়ে।

মাদ্রাসা ও শিশুর পরিবার সূত্র জানায়, আজ সকাল ৯টার দিকে আয়েশা বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় আসে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাশতার বিরতির সময় সে অন্য শিশুদের সঙ্গে মাদ্রাসার মাঠে খেলছিল। বেলা সোয়া ১১টার দিকে এক তরুণ মুখে মাস্ক পরে মাদ্রাসার মাঠে আসেন। তখন তিনি অন্য শিশুদের কাছে আয়েশার নাম বলে খুঁজতে থাকেন। এক শিশু আয়েশাকে দেখিয়ে দিলে ওই তরুণ আয়েশার হাত ধরে মাদ্রাসায় যাওয়ার সড়ক দিয়ে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের দিকে নিয়ে যান। সেখানে অপেক্ষারত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়ক ধরে চলে যান। ওই শিশুর এক সহপাঠী ঘটনাটি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জানায়। তখন মাদ্রাসার শিক্ষক মাসুদ আলম মুঠোফোনে আয়েশার মাকে ঘটনাটি জানান। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে ঘটনাটি সদরের পালং মডেল থানায় জানানো হয়। স্বজনেরা জেলা শহর ও এর আশপাশে মাইকিং শুরু করেছেন।

অপহরণের শিকার শিশু আয়েশা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

ওই শিশুকে অপহরণের ঘটনা ধরা পড়েছে মাদ্রাসা ও পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে কালো জ্যাকেট, জিনস প্যান্ট পরা ও মুখে মাস্ক পরা এক তরুণ আয়েশাকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। আয়েশার সঙ্গে জামিলা নামের তার এক সহপাঠী হেঁটে যাচ্ছে। ওই তরুণ কিছুদূর যাওয়ার পর অটোরিকশায় আয়েশাকে তুলে নিয়ে যান। আয়েশাকে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে থাকা জামিলা দৌড়ে এসে মাদ্রাসার শিক্ষকদের ঘটনাটি জানায়।

আজ দুপুরে চরপালং এলাকায় আয়েশাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে আশপাশের বাড়ির নারীরা ভিড় করেছেন। আয়েশার মা ফারজানা আক্তার ও দাদি রানী বেগম বিলাপ করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা আয়েশাকে খুঁজতে বিভিন্ন স্থানে গেছেন।

অপহরণের শিকার শিশু আয়েশার পরিবারের সদস্যরা বিলাপ করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরের চরপালং এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ফারজানা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে মেয়ে আর ফেরেনি। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মাদ্রাসার এক শিক্ষক ফোন করে জানান, অটোরিকশায় এক ব্যক্তি আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। আমাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। কারা কী উদ্দেশ্যে আমার ছোট্ট মেয়েটাকে অপহরণ করল, তা বুঝতে পারছি না।’

আয়েশার বাবা জাকির তালুকদার মৎস্য খামার ও পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত। বিকেল ৫টার দিকে তাঁর কাছে খবর আসে, শিবচরের ছিলারচর এলাকায় একটি শিশুকে পাওয়া গেছে। খবর পেয়েই মেয়ের সন্ধানে তিনি ছিলারচরের দিকে ছোটেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানি না কারা কেন আমার মেয়েকে অপহরণ করেছে। নানা জায়গায় খোঁজ নিচ্ছি। মেয়েকে অপহরণ করার পর কেউ কোনো মুক্তিপণও চায়নি।’

পালং মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাছ থেকে এক শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর জেলা শহর থেকে বের হওয়ার সবগুলো সড়কে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। আশপাশের সব কটি থানায় জানানো হয়েছে। তাঁরা ওই শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।