বরিশালে ২ নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা, নজরদারিতে স্বামী
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ভূতেরদিয়া গ্রামে একই পরিবারের দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে নিহত গৃহবধূ রিপা আক্তারের বাবা শাহজাহান হোসেন খান বাদী হয়ে বাবুগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন।
পুলিশ বলছে, মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে হত্যাকাণ্ড রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেন ও মা মিনারা বেগমের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সোলায়মানকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছিল।
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, রিপার স্বামী সোলায়মান পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তাঁর মা মিনারা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার ভূতেরদিয়া গ্রামের প্রয়াত ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে দেলোয়ারের মা লালমুন্নেছা বেগম (৯৮), স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০) ও ছেলে সোলায়মানের স্ত্রী রিপা আক্তারকে (২৩) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা। ওই তিনজনকে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে লালমুন্নেছা ও রিপাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার সকালে মিনারা বেগমের জ্ঞান ফেরে। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
নিহত রিপার বাবা শাহজাহান হোসেন খান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, এটা হত্যাকাণ্ড এবং হত্যার পরিকল্পনার মূলে আছেন রিপার স্বামী সোলায়মান ও তাঁর মা মিনারা। মামলার আরজিতে এটা উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। এ জন্য আমরা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করিনি।’
ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রতিবেশী দেলোয়ারের ঘরের সামনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। তখন লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে লোকটি সটকে পড়েন। এ সময় সন্দেহ হলে তিনি বাড়ির লোকজনকে ডেকে দেলোয়ারের ঘরে গিয়ে দেখতে পান, ঘরের মাটির ভিটার এক পাশে সিঁধ কাটা ও দরজা খোলা। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, বাড়িতে থাকা তিন নারীই অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন।
ঘটনার রাতে রিপার স্বামী সোলায়মান বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বরিশাল নগরের ঝরঝরিয়াতলা এলাকায় তাঁর ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানের চার্জ দেওয়ার গ্যারেজে ছিলেন।
রিপার স্বজনদের অভিযোগ, বছর চারেক আগে বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের রিপা আক্তারের সঙ্গে ভূতেরদিয়া গ্রামের সোলায়মানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য, ঝগড়া চলছিল। এর জেরে প্রায়ই রিপাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
রিপার চাচা নুর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি চুরি বলে চালাতে সিঁধ কাটা হয়েছে। যে সিঁধ কাটা হয়েছে, সেখান দিয়ে একজন ব্যক্তি আসা-যাওয়া করতে পারে না। রিপার স্বামীর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি বলেন, ঘটনাটি যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, সেটা শতভাগ নিশ্চিত। ঘটনার সময় ওই বাড়িতে তিনজন নারী ছিলেন। তাঁদের দুজন মারা গেছেন। একজন বেঁচে আছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। তিনি সুস্থ হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। রিপার স্বামীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।