কিশোরগঞ্জে অবরোধে কয়েক স্থানে সংঘর্ষ, বাস চলাচল কম
বিএনপি-জামায়াতের ডাকে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের কয়েক স্থানে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। অবরোধের কারণে কিশোরগঞ্জ শহরে যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার খুব কমসংখ্যক বাস ছেড়ে গেছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকায় অবরোধকারীরা বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তার মাঝখানে এনে ফেলে রাখেন। একই সময় টায়ারে আগুন ধরিয়ে ও ইট ফেলে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এতে সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এর কিছুক্ষণ পর কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর সড়কের কাতিয়ারচর এলাকায় টাওয়ারে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে আসেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তিন থেকে চারটি গুলি ছোড়ে এবং ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে। এ ছাড়া ভৈরব- ময়মনসিংহ সড়কের কিশোরগঞ্জ সদরের সগড়া, রশিদাবাদ, জেলখানা মোড়, কাতিয়ারচর, মোল্লাপাড়া ও চৌদ্দশত ইউনিয়নের নান্দলা এলাকায় অবরোধকারীরা সড়কে টায়ারে আগুন দেওয়াসহ নানা উপায়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক খবর পাওয়ামাত্র ওই স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে জেলা শহরের গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সব বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী একেবারে নেই বললেই চলে। অনন্যা পরিবহনের বাস কাউন্টারের মাস্টার ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ভোর থেকে যাত্রীসংকটের কারণে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল ৯টার দিকে মাত্র সাত যাত্রী নিয়ে একটি বাস ঢাকার মহাখালীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে নিরাপত্তার জন্য বাসের পিছু একটি পুলিশের পিকআপও গেছে। অন্যান্য দিন এ বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা থেকে অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্ল্যাসিক, অনন্যা সুপার, যাতায়াত পরিবহনের বাস ঢাকার উদ্দেশে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর ছেড়ে যেত। এ ছাড়া ময়মনসিংহের উদ্দেশেও ভোর থেকে কয়েকটি বাস যেত। কিন্তু আজ সকাল ৯টার দিকে অনন্যা পরিবহনের মাত্র একটি বাস সাত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়।
হাওরের ইটনা থেকে নাজমুল আলম নামের একজন ঢাকায় যাবেন বলে গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। তিনি সকাল পৌনে ১০টার দিকে বলেন, ‘জরুরি কাজে ঢাকা যাব বলে এসেছিলাম। কিন্তু স্টেশনে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখলাম, আমিসহ মাত্র দুজন যাত্রী। বাস যাবে কি না আর গেলেও নিরাপদে পৌঁছাতে পারব কি না, সেটা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি।’
সরেজমিনে সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়কের বড়পুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার যানবাহন খুবই কম। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত দু-একটা বাস যেতে দেখা যায়। তবে বাসসহ দূরপাল্লার ভারী যানবাহন যাতে চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে ভোর থেকে পুলিশের বেশ তৎপরতা দেখা যায়। আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ ও র্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়িকে একটু পরপর টহল দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা আছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে অন্য দিনের তুলনায় যানবাহন ও মানুষ কম দেখা গেছে। অনেকেই দোকানপাট খোলেন দেরিতে। হোটেলসহ অন্যান্য দোকান যাঁরা খুলেছেন, তাঁদের এখানে ক্রেতা ও খদ্দেরের সংখ্যাও কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ভিড় বাড়ছে শহরে।
চৌদ্দশত এলাকার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকাল ১০টার দিকে এ এলাকায় প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গুলি ও ৫ থেকে ৬টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে অবরোধকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ কারণে সড়কে অনেক ইটপাটকেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, অনেক জায়গায় অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে পুলিশ খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে চৌদ্দশত এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশ কয়েকটি গুলি ও কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। তবে হিসাব শেষে বলা যাবে, কয়টি গুলি আর কয়টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।