ম্রো ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র 'ম্রো রূপকথা'
চলচ্চিত্রটির নাম 'ম্রো রূপকথা'। নামটি বাংলায় হলেও এটি ম্রো ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র। ম্রো জীবন ও সমাজ নিয়ে প্রামাণ্য এই চলচ্চিত্র আবর্তিত হয়েছে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রোকে নিয়ে। তাঁর মধ্যে দিয়েই দেখানো হয়েছে ম্রো সমাজকে।
গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝিতে বাইরের জগতে ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষের পদচারণের শুরু। একদিকে নিজেদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ধরে রাখার সংগ্রাম, অন্যদিকে এগিয়ে যাওয়ার তাড়না। দ্বিমুখী এই সংগ্রামই চলচ্চিত্রের উপজীব্য। আর ম্রো সমাজের প্রতিনিধি হয়ে ওঠা ইয়াংঙান ম্রো রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। নিজের মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করতে তিনি শুরু করেছিলেন লেখালেখি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর হয়েও ছাড়েননি ম্রোদের প্রথাগত জীবনযাপন।
৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির নির্মাতা এ বি এম নাজমুল হুদা। তিনি জানালেন, চলচ্চিত্রের সব সংলাপ ম্রো ভাষায়। বাংলা সাবটাইটেল যুক্ত আছে দর্শকের বোঝার সুবিধার্থে।
নাজমুল জানান, চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র ইয়াংঙান নিজের বয়ানে ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল আঙিনায় যাওয়া প্রথম ম্রো ছিলেন তিনি। অথচ একসময় বাংলা ভাষা বুঝতেই পারতেন না। শৈশবে ম্রো আবাসিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর শিক্ষকের কথা না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। ভাষার এই বাধা অতিক্রম করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পৌঁছেছিলেন শেষ পর্যন্ত।
ইয়াংঙানের জীবনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে ম্রো রূপকথা, লোককাহিনির কথাও উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে বন, ঝিরিঝরনা ও প্রাণপ্রকৃতির সঙ্গে সহজ–সরল জীবনের সম্পর্কও উন্মোচন হয়েছে। ম্রো লোককথা অবলম্বনে ৯ মিনিটের একটি অ্যানিমেশনও 'ম্রো রূপকথা' চলচ্চিত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জুমচাষ, গোহত্যা উৎসবে বাঁশির সুরে নাচের প্রতিযোগিতা, ঘরে-বাইরে ম্রো নারীর জীবনসংগ্রাম, ক্রামাদি মেনলের নবপ্রবর্তিত ক্রামা ধর্মের কথাও এসেছে চলচ্চিত্রটিতে।
'ম্রো রূপকথা ’ চলচ্চিত্রটি স্বপ্নময় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ও গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্সের সহযোগিতায় ১৫ ফেব্রুয়ারি লেখক ইয়াংঙান ম্রোর গ্রাম বাইট্ট্যাপাড়ায় প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানকার ম্রো বাসিন্দারা বড় পর্দায় প্রথম ম্রো ভাষার চলচ্চিত্র দেখেছেন। চলচ্চিত্রটি দেখার সময় কখনো পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল আর কখনো হাসি ও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল দর্শক।
চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র ইয়াংঙান ম্রো প্রথম আলোকে বলেন, ম্রো ভাষা ও সংস্কৃতির পরিসর বাড়াতে সাহায্য করবে এই চলচ্চিত্র। এই পর্যন্ত বাংলা ও ম্রো ভাষার ৩৩টি বইয়ের রচয়িতা ইয়াংঙান মনে করেন, এই চলচ্চিত্র ম্রো সমাজকে সমতলের মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাবে।