‘ও খোদা, এই ট্রাক দি আঁই কিরমু’

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের এই গ্রামীণ সড়কে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় এক কিশোরছবি: প্রথম আলো

সড়কের ওপর কলাপাতায় ঢাকা ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে ছুটে এসে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না মো. রিয়াদ। যে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে তাঁর ১৬ বছর বয়সী ছেলে অনীক মারা গেছে, সেটির মালিক তিনি নিজেই। ট্রাকটিও ঘটনাস্থলেই ছিল। সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে বিলাপ করছিলেন রিয়াদ। বলছিলেন, ‘ও খোদা, তুঁই ইয়ান কিল্লা, অন এই ট্রাক দি আঁই কিরমু।’

ট্রাক্টরকে ট্রাকে পরিণত করে মাটি ও ফসল পরিবহন করা হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। এ ধরনের একটি ট্রাকের মালিক মো. রিয়াদ আজ মঙ্গলবার সকালে ট্রাকটি চালাতে দিয়েছিলেন মান্না নামের একজনকে। অনীক সেই ট্রাকের পেছনে ছিল। দুপুরে দ্বীপ উপজেলাটির বাউরিয়া ইউনিয়নে মৌলভিবাজার সড়কে চালক ব্রেক কষলে অনীক ছিটকে পড়ে চাকার নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এর আগে গত ৩ এপ্রিল মুছাপুর ইউনিয়নে এ রকমই একটি রূপান্তরিত ট্রাকের নিচে পড়ে প্রাণ যায় মো. পারভেজ নামের একজনের।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বেলা দেড়টায় মৌলভিবাজার থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার রাস্তায় তাঁরা অনীকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন কয়েকটি কলাপাতা দিয়ে মৃতদেহটি ঢেকে দেন। নূর ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো অনীকের বাবা রিয়াদ ট্রাকটির মালিক। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে রিয়াদ ছেলের মৃতদেহ দেখতে পান। বুক চাপড়ে তিনি বলতে থাকেন, এখন এই ট্রাক দিয়ে কী করবেন তিনি।

সন্দ্বীপ থানার উপপরিদর্শক চয়ন দাশগুপ্ত ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকটির মালিক অনীকের বাবা মো. রিয়াদ। আজ মান্না নামে একজন চালাচ্ছিলেন ট্রাকটি। ঘটনাস্থলে কড়া ব্রেক ধরার ফলে ট্রাকে থাকা অনীক চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক মান্না পালিয়েছেন।

ট্রাক্টর থেকে ট্রাকে রূপান্তর করা এসব বাহনে মালামাল বহন করা হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা
প্রথম আলো

চয়ন দাশগুপ্ত বলেন, অনীকের বাবা রিয়াদ ঘটনাস্থলে এসে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

গত ৩ এপ্রিল মুছাপুর ইউনিয়নের নামার বাজার এলাকায় মোড় ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ট্রাকের শ্রমিক পারভেজের। পরপর দুজনের মৃত্যুতে এ ধরনের অবৈধ ট্রাকের চলাচল নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি পরিবহনের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে এসব রূপান্তরিত ট্রাক। সামনের দুই চাকায় ব্রেকের ব্যবস্থা থাকলেও পেছনের ভারবাহী কাঠামোতে থাকে না কোনো নিয়ন্ত্রণ। ফলে দুর্ঘটনার প্রবল ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নামছে এসব যান।

সন্দ্বীপের নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমার কাছে এসব ট্রাকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সন্দ্বীপে এসে এই অদ্ভুত ট্রাকগুলো দেখতে পাই। বিভিন্ন সময় এসব যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে মালামাল পরিবহনের বিকল্প না থাকার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এখন ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় ট্রাকের প্রচলনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এবার এসব পরিবহন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’