‘হার্ট অ্যাটাকে’ বগুড়া কারাগারে আরও এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
বগুড়া জেলা কারাগারে বন্দী এক আওয়ামী লীগ নেতার ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবদুল মতিন ওরফে মিঠু (৬৫) নামের ওই নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে গতকাল দিবাগত রাতে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল।
আবদুল মতিন জেলার গাবতলী উপজেলার বৈঠাভাঙা দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুর্গাহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ দিনে বগুড়া কারাগারে বন্দী থাকা চারজন আওয়ামী লীগ নেতা ‘হৃদ্রোগে আক্রান্ত’ হয়ে মারা গেলেন।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মতিন ২৪ আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাঁর শারীরিক কোনো অসুস্থতা ছিল না। রোববার সকালে গলাব্যথার সমস্যার কথা বলেন। সে অনুযায়ী, কারা চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ওষুধ খাচ্ছিলেন। রোববার রাত পৌনে তিনটার দিকে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকালের দিকে তিনি হৃদ্রোগে মারা যান। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া কারা কতৃপর্ক্ষ রাত ৪টা ২০ মিনিটে আবদুল মতিনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। রাত ৪টা ৩০ মিনিটে তাঁকে হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে আটটায় তিনি মারা যান।
এর আগে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ওরফে ঝুনু (৫৭) গত ২৬ নভেম্বর কারাবন্দী অবস্থায় ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা যান। ২৫ নভেম্বর মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ (৬৭)। এ ছাড়া ১১ নভেম্বর কারাবন্দী অবস্থায় ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা যান বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ওরফে রতন (৫৮)।
আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদত আলমের স্ত্রী মাহবুবা মনজুর বলেন, শাহাদতের হৃদ্রোগের কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। কারাগারে যাওয়ার পর হার্ট অ্যাটাকের কারণ এখনো অজানা।
শহিদুল ইসলামকে গত ৪ অক্টোবর আটকের পর বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ১১ নভেম্বর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, শহিদুল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। হার্ট অ্যাটাকের পর তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
শহিদুলের স্ত্রী শাহিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ইসলাম হার্টের রোগী ছিলেন না। ৫ নভেম্বর কারাগারে দেখা করতে গেলে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ানো ছাড়া তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ১১ নভেম্বর মধ্যরাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে মারামারি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে শিবগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর আবদুল লতিফকে কারাগারে পাঠায় শিবগঞ্জ থানা–পুলিশ। ২৩ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বগুড়া জেলা কারা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আবদুল লতিফের ছেলে শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ নভেম্বর তাঁর বাবা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন পর ২৫ নভেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কারা অভ্যন্তরে অসুস্থতার সঠিক কারণ কারা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।
বগুড়া কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কোনো বন্দী অসুস্থ হলে কারাগারে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শাহাদত আলম, শহিদুল ইসলাম, আবদুল লতিফ ও আবদুল মতিন হার্ট অ্যাটাক করলে কারাগারের চিকিৎসকের পরামর্শেই তাঁদের কারাবিধি মেনে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। অসুস্থ বন্দীদের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা–নিরীক্ষায় শাহাদত আলমের হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে। আবদুল মতিনও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। শহিদুল ও আবদুল লতিফের মৃত্যুর সঠিক কারণ হার্ট অ্যাটাক ছিল কি না, তা নথি না দেখে বলা সম্ভব নয়।