জামালপুরে যমুনার পানি আবার বেড়ে লোকালয়ে ঢুকছে, খাদ্যসংকটে মানুষ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি আবার বেড়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রথম দফায় বন্যার পানি বিভিন্ন এলাকা থেকে নেমে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পানি বেড়ে ফের উঁচু এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জামালপুর কার্যালয়ের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ভয়াবহ কিছু হওয়ার আশঙ্কা নেই। দুর্গত এলাকা জলমগ্ন থাকলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আজ সকাল থেকে পানি আর বৃদ্ধি পায়নি। আশা করা যাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি আবার কমতে শুরু করবে।
দুর্গত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামপুরের চিনাডুলী, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা, সাপধরী ইউনিয়ন; দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভার উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল থেকে ফের ওই সব এলাকার উঁচু স্থানগুলোয় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে পাটসহ বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। অনেক গ্রামেই অল্প পানি ছিল। দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ায় নতুন করে আবার পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষ। ওই সব গ্রামের মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বজনদের বাড়ি থেকে নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। নতুন করে ঘরবাড়ি মেরামত করেছিলেন, কিন্তু এর মধ্যে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় আছেন তাঁরা।
ইসলামপুরের চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, বহু মানুষ এখনো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়কের পাশে ও সেতুর ওপর আশ্রয় নিয়ে আছেন। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। মানুষের কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। সব মিলিয়ে দিশাহারা বন্যার্ত মানুষ। বন্যার্তদের জন্য আরও ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ জন বাসিন্দা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মৎস্যখামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।