মেহেরপুরে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ, লোকসানের শঙ্কা 

মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। গত মঙ্গলবার গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া কাঁচাবাজারেপ্রথম আলো

কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল অনেক বেশি। এ কারণে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকেরা গত এক যুগের মধ্যে এই প্রথম লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

চাষিরা জানান, সারা বছর পেঁয়াজের দাম ছিল। যখন কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন, ঠিক তখনই পেঁয়াজের বাজার পড়ে গেল। সরকারকে অবশ্যই একটি দাম বেঁধে দেওয়া উচিত। তা না হলে আগামী বছর আর কেউ পেঁয়াজ চাষ করতে আগ্রহী হবেন না।

চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বছর ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল।

জেলার পাঁচটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৫০ টাকা। পৌর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় চালপট্টিতে গড়ে ওঠা কাঁচাবাজারে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ৪৫ টাকা কেজি, পাইকারি বাজারে ৪০ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে।

শহরের বড় বাজার এলাকার কাঁচাবাজারে পুরোনো পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরোনো পেঁয়াজ থেকে কলি বেরিয়ে গেছে। এ কারণে ক্রেতারা নতুন পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। মুড়িকাটা এক কেজি পেঁয়াজ ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ী মতলেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি ও খুচরা কেনাবেচাতে ৫ থেকে ১০ টাকার পার্থক্য থাকে। একসঙ্গে পুরো জেলার পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম আরও কমে আসবে।

সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে ছয় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এবারে সারের সংকট ছিল। বীজের দামও পড়েছে বেশি। আবহাওয়াও ভালো ছিল না। এরপরও পেঁয়াজ মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পড়ে গেছে। লোকসানের হিসাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি মজুরি খরচ, সার ও কীটনাশক, বীজ কেনা দিয়ে মোট ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। দাম এভাবে কমে গেলে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে।

পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে ভালো লাভ করা সম্ভব বলে মনে করেন গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

মেহেরপুরে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার।