উখিয়ার বনের সেই হাতির মৃত্যু হয়েছিল গুলিতে, বন্দুক উদ্ধার

কক্সবাজারের উখিয়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে ৩৫ বছর বয়সী একটি পুরুষ হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ার বনে ১৫ মার্চ যে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটির মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এর প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় বনকর্মীরা একটি বন্দুক উদ্ধার করেছেন। তবে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। উখিয়া রেঞ্জের সদর বিটের জুমছড়ি এলাকার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী এশিয়ান জাতের পুরুষ বন্য হাতির মরদেহটি উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ। হাতিটির মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। দেড় কিলোমিটারজুড়ে দেখা যায় ছোপ ছোপ রক্ত।

এ নিয়ে ওই দিন প্রথম আলোতে ‘উখিয়ার বনে হাতির মৃত্যু, দেড় কিলোমিটারজুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে দুষ্কৃতকারী একাধিক গুলিতে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে গুলিতে হাতির মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। হাতি হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, তা অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন। ময়নাতদন্তে হাতির শরীর থেকে গুলিসদৃশ দুটি সিসা আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছিল। গুলিতে হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।

উখিয়া বন রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, হাতিকে কারা গুলি করেছে, কীভাবে করেছে, তার অনুসন্ধান চলছে। ইতিমধ্যে উখিয়ার ইনানীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি টংঘর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বন্দুকটি উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছে, বনাঞ্চলের ভেতরে থাকা দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে হাতিকে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের সাত হাজার একরের বেশি বনাঞ্চল ও পাহাড় ধ্বংস করে আট বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৩৪টি আশ্রয়শিবির। আশ্রয়শিবিরগুলোয় নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। আশ্রয়শিবির গড়ে তোলার কারণে ৫০টির বেশি এশিয়ান জাতের বন্য হাতি খাদ্যসংকটে পড়েছে।

হাতি চলাচলের সাতটির বেশি করিডর বেদখলে চলে যাওয়ায় টেকনাফের বনাঞ্চলের হাতিরা উখিয়া-রামু এবং রামু ও উখিয়া বনাঞ্চলের হাতিরা টেকনাফের দিকে যেতে পারছে না। তা ছাড়া পাহাড়ি ছড়া, জলাশয় ভরাট হওয়ায় হাতি খাবার পানির সংকটেও পড়েছে। রোগাক্রান্ত হয়ে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। প্রসবের সময় মা হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।