চাঁদপুরের বাজারে ইলিশ কম, দাম বেশি

ক্রেতার আশায় বসে আছেন এক ইলিশ বিক্রেতা। বাজারে ইলিশ কম। আর যা আছে তা ডিমওয়ালা হওয়ায় চড়া দামে কিনতে চান না​ ক্রেতারা। গতকাল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারেছবি: প্রথম আলো

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাছের বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ মিলছে না। কয়েক দিন ধরে বাজারে সামান্য পরিমাণে ইলিশের দেখা মিললেও দাম তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া অধিকাংশ মাছই ডিমওয়ালা হওয়ায় এগুলো ক্রেতারা কিনতে চান না। এ কারণে ইলিশের বেচাকেনা কম জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

৩ নভেম্বর ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পর সাগর থেকে মেঘনায় তেমনভাবে ইলিশ আসছে না। সেই সঙ্গে নদীতে পানির চাপ কমে যাওয়ায় জেলেদের জালে প্রত্যাশিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে।

গতকাল সোমবার ও গত রোববার সকালে মতলব উত্তরের ছেংগারচর, আমিরাবাদ, সুজাতপুর, গজরা ও এনায়েতনগর বাজার এবং মতলব দক্ষিণের উপজেলা সদর, মুন্সিরহাট ও নারায়ণপুর মাছের বাজারে দেখা যায়, সেখানে কিছু ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন একাধিক বিক্রেতা। এগুলোর অধিকাংশের পেটে ডিম আছে। দু-চারজন ক্রেতা ইলিশের দরদাম করে ফিরে যাচ্ছেন। বেচাকেনা তেমন না হওয়ায় এসব বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার হাঁকডাক একেবারে নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারের মাছ বিক্রেতা প্রাণ কৃষ্ণ দাস বলেন, এখন বাজারে তেমন ইলিশ আসছে না। নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ১৬ কেজি ইলিশ আসছে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। বাজারের অধিকাংশ ইলিশই ডিমওয়ালা। এর ওপর দাম চড়া। এ কারণে ক্রেতারা ইলিশ কিনতে নারাজ। দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে ইলিশ কিনতে গিয়েছিলেন মতলব উত্তরের ফতেপুর এলাকার কৃষক ওয়াদুদ মিয়া। কিন্তু না কিনেই বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ কিনতে পারি নাই। কয়েক দিন আগে একখান বড় ইলিশ কিনতে বাজারে গেছি। দাম হুইনা মাথা ঘুইরা গেছে। কম টেয়া নিয়া ইলিশ কিনুম ক্যামনে। এরলিগা মুলামুলি কইরাই চইলা আসছি। ইলিশের বদলে কিছু পাঙাশ কিনছি। আমাগো পাতে ইলিশ জুটব না।’

আরও পড়ুন

জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক জেলে। এ বিষয়ে মতলব উত্তরের ষাটনল মালোপাড়া এলাকার জেলে পরিমল দাস বলেন, ‘নিষেধজ্ঞা উইঠা গেলেও জালে ইলিশ উঠে না। হারা রাইত জাল পাইত্তা পাঁচ থেকে সাতটা ইলিশ জোডে। এগুলি বেইচ্চা ট্রলারের ডিজেল খরচই উডে না। ইলিশ না পাওনে খুব হতাশায় আছি। পরিবার নিয়াও বিপাকে আছি।’

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মতলব উত্তরের মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস ও মতলব দক্ষিণের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান। তাঁরা বলেন, এবার ইলিশ রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় আগামী দিনে প্রত্যাশিত ইলিশ পাওয়া যাবে। তাঁর মতে, সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ সাগর থেকে মেঘনার মিঠা পানিতে আসে। প্রজননের সময় শেষ হওয়ার পর ইলিশের গতিমুখ থাকে সাগরের দিকে। এ সময় মেঘনায় পানির চাপও কম থাকে। এসব কারণে প্রত্যাশিত ইলিশ ধরা পড়ছে না।