৯ বছর পর সিলেটের জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির অস্ত্রোপচার
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৫ সালের জুনে সর্বশেষ অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয়েছিল। সফল অস্ত্রোপচার হলেও সে সময় একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নেতিবাচক প্রচার হয়। এরপর ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারের বিষয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সিলেট শহর অথবা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালমুখী হন।
এর মধ্যে কেটে গেছে ৯ বছর। আজ সোমবার সকালে আবারও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নবজাতক ও মা দুজনই সুস্থ আছেন। এতে খুশি ওই নবজাতকের পরিবারের সদস্য ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতক জন্মের ঘটনায় এলাকায় হাসপাতালটির প্রতি আস্থা ফিরেছে।
নবজাতকের বাবা সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে বারবার অভয় দিয়েছেন। তাঁদের আশ্বাস পেয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। চিকিৎসকদের সেবায় তিনি খুশি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে অস্ত্রোপচার চলাকালে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন এক প্রসূতির স্বজনেরা। তবে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিল। সুস্থ মা ও নবজাতককে স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছিল। জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনাটি এলাকায় নেতিবাচকভাবে রটে যায়। এরপর সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আর কোনো নবজাতকের জন্ম হয়নি।
গতকাল রোববার বিকেলে জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের বারগাতী গ্রামের সেলিম আহমেদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সাজিদা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে সাজিদা বেগমের পেটের বাচ্চাটি উল্টো হয়ে আছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। ফলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আজ সকালে অস্ত্রোপচার করা হয়।
হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট সঙ্গিতা দেবী, অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট জনি লাল দাস ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলাদুর রহমান অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ নার্স মুসলিমা খাতুন ও উর্মী আক্তার অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩৫০–এর মতো রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন। তবে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের সব সুবিধা রয়েছে বলে জানানো হচ্ছিল। কিন্তু কেউই হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপচার করাতে চাচ্ছিলেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, গাইনির চিকিৎসক, অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, কনসালট্যান্টসহ সব সুবিধা রয়েছে। এরপরও বাড়ির কাছের হাসপাতাল ছেড়ে সিজারের জন্য দূরের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক নির্ধারণ করতেন। সেবাপ্রার্থীদের বুঝিয়েও কাউকে সিজার করাতে রাজি করা যায়নি। তবে গতকাল এক রোগীর অভিভাবক আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন, যার ফলে সফল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব রয়েছে।’
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। তারাও এতে সমর্থন দিয়ে আশ্বস্ত করেছে। তবে সিজারের অস্ত্রোপচার বিদ্যুৎ ছাড়া দিনের আলো কিংবা টর্চের আলোতেও সফলভাবে করা সম্ভব। এতে কোনো ঝুঁকির বিষয় নেই বলে তিনি জানান।
জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনির চিকিৎসক, অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসকসহ সব ধরনের সরঞ্জাম আছে জানিয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে সিজার বন্ধ ছিল। তবে গতকাল সফলভাবে হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। নিজ এলাকা ছেড়ে অনেকেই আগে দূরের এলাকায় গিয়ে সিজার করিয়েছেন। এতে আর্থিক ও শারীরিক পরিশ্রম করেছেন। তবে এখন থেকে জৈন্তাপুরের বাসিন্দারা বাড়ির পাশেই প্রসূতির অস্ত্রোপচার করাতে সাহস পাবেন।