বরিশালে ৭ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে অপসোনিন ফার্মার শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

অপসোনিন ফার্মার শ্রমিকেরা সাত দফা দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কেছবি: প্রথম আলো

বরিশালে বেতন-বোনাস বাড়ানোসহ সাত দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিন ফার্মার শ্রমিকেরা। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজার সামনে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য পরিবহন আটকা পড়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন অপসোনিন ফার্মার শ্রমিক মো. রানা, খুকু মনি, তাইজুল ইসলাম ও মো. রাব্বি। শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী, সোনারগাঁও টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান, অর্থ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল হাওলাদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অপসোনিনের শ্রমিকেরা দৈনিক ২৪০ টাকা মজুরি; অর্থাৎ ঘণ্টায় ৩০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। যেখানে তাঁদের ৮ ঘণ্টা কাজ করার কথা, কিন্তু তাঁদের দিয়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করানো হয়। অবশিষ্ট চার ঘণ্টার জন্য ওভার টাইমের টাকা দেওয়া হয় না। শ্রমিকেরা অমানুষিক পরিশ্রম করে যে অর্থ পান, তাতে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দৈনিক মজুরিতে কাজ করার ফলে বেতন বাড়ানোর কথা বললেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়। আর চাকরির জন্য কোনো নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে আছে বেতন-বোনাস বাড়ানো, ওভার টাইমের পারিশ্রমিক দেওয়া, কথায় কথায় শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধ করা, ৬ মাসের বেশি কর্মরত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা, ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতন নির্ধারণ করা, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেওয়া।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ভাষ্য, বিক্ষোভের মুখে ও প্রশাসনের চাপে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবরোধস্থলে আসেন এবং কারখানায় ফিরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে থাকা অবস্থাতেই সমস্যা সমাধান চান। পরে দুপুরে অপসোনিন ফার্মার ব্যবস্থাপক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবস্থাপক মো. সুমন, প্রশাসনবিষয়ক ব্যবস্থাপক মো. সাইদুর রহমান এবং শ্রমিকদের পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তীর বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে বেলা দুইটার দিকে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, আগামীকাল থেকে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৮ ঘণ্টায় ১০০ টাকা বৃদ্ধি করা, ৭ দিনের মধ্যে ৬ মাসের বেশি কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শুরু, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং এক মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে মালিকপক্ষ আন্দোলনরত শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাই বা হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত জেনে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা সাত দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ী করাসহ দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটাম দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যান। সেই সঙ্গে দাবি না মানলে আবারও রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।