রুমায় ‘কেএনএফ সদস্যের’ গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, আতঙ্কে জনশূন্য পাঁচটি পাড়া
বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একজন সদস্যের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের আর্থাপাড়া এলাকা থেকে কেএনএফের পোশাক পরা ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তার নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার পাইন্দু ইউনিয়নে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এসব বন্দুকযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো কেএনএফ সদস্যের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটল।
এদিকে এসব ঘটনার কারণে আতঙ্কে ওই এলাকার বম ও মারমাদের পাঁচটি পাড়া থেকে লোকজন অন্যত্র চলে গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এ পাড়াগুলো হলো পাইন্দু ইউনিয়নের হ্যাপিহিলপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, আর্থাপাড়া, মুননুয়ামপাড়া ও মুয়ালপিপাড়া।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, আর্থাপাড়া ও বাসত্লাংপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের ওপর গতকাল দুপুরে হামলা চালান কেএনএফ সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়লে কেএনএফের সদস্যরা পালিয়ে যান। আজ সকাল থেকে সেখানে তল্লাশির একপর্যায়ে আর্থাপাড়া এলাকা থেকে কেএনএফের পোশাক পরা এক সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পাশে একটি দোনলা কার্তুজ বন্দুক ও ৭০টি গুলি পাওয়া গেছে।
আর্থাপাড়া রুমা উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পাইন্দু ইউনিয়নে অবস্থিত। পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে হ্যাপিহিলপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, আর্থাপাড়া, মুননুয়ামপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলি চলছিল। গতকাল দুপুরে বাসত্লাংপাড়া ও আর্থাপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একদল কেএনএফ সদস্য হামলা করেন। নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়লে কেএনএফ সদস্যরা পালিয়ে যান। এ সময় গুলিতে একজন কেএনএফ সদস্য নিহত হন। গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে পাড়ার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেএনএফের অত্যাচার ও নির্যাতনে পাড়াগুলো থেকে বম ও মারমা বাসিন্দারা বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা রুমা উপজেলা সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে অবস্থান করছেন। আশ্রিত পরিবারগুলোকে সেনাবাহিনী খাবার, শীতবস্ত্র, চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করছে।
রুমা উপজেলা সদরের আট কিলোমিটার দূরের মুয়ালপিপাড়া থেকে মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে আশ্রয় নেওয়া হ্লাথোয়াইচিং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মুয়ালপিপাড়ায় ৭১টি বম ও ৫১টি মারমা পরিবার একসঙ্গে বাস করেন। গতকাল থেকে পাড়ায় কেউ নেই। মারমারা উপজেলা সদরে এসেছে। বমরা কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা তাঁর জানা নেই।
মুয়ালপিপাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মুয়ালপিপাড়ায় এক মাস ধরে কেএনএফের একটি দল অবস্থান করছিল। এতে তাঁরাসহ আশপাশের পাড়াগুলোর বাসিন্দারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয়ে ও নানামুখী চাপে কোনো কাজও করতে পারেননি। এখন জুমচাষের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করতে না পারলে জুমচাষও করা সম্ভব হবে না। আর জুমচাষ করতে না পারলে আগামী কয়েক মাস পর অনাহারে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না।
রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বম জনগোষ্ঠী–অধ্যুষিত দুর্গম এলাকাগুলোতে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২০ সাল থেকে তৎপরতা শুরু করে। তাদের দাবি, তারা বম, ম্রো, পাংখুয়া, লুসাই, খেয়াং ও খুমিদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন ১২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কেএনএফ তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সঙ্গে চুক্তি করে। তখন থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থায়নে কেএনএফ শক্তি বাড়াতে থাকে। বর্তমানে তাদের ১৫০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১২ ও ১৪ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।