আখাউড়ায় মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় উত্তেজিত নেতা–কর্মীরা। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের বাইরেছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে নিয়ে শোভাযাত্রা শেষে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেনসহ উভয় পক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সবার নাম–পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে ট্রেনে চড়ে সেখানে যান মন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে ঢাকা থেকে আখাউড়া রেলস্টেশনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া) ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান মনির হোসেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোভাযাত্রাসহ স্টেশনের বাইরে সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে অবস্থান নেন। এদিকে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে স্টেশনটির ভেতরে অবস্থা নেন পৌর মেয়র তাকজিল খলিফার নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহবুদ্দিন বেগ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন ভূঁইয়াসহ অনেক নেতা-কর্মী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মন্ত্রী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বের হয়ে গাড়িতে কসবার উদ্দেশে রওনা হন।

এ সময় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলার সড়ক বাজারের দিকে হাঁটা শুরু করেন উভয় পক্ষের নেতারা।

দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরের এক আত্মীয়কে চড় মারেন পৌর মেয়রের ভাই ফোরকান খলিফা। এদিকে একই সময়ে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরের সঙ্গে দৌড়ে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাচনে মনিরের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেনকে কে বা কারা লাথি মারে। এর জের ধরে মুরাদ হোসেন, শাহাবুদ্দিন বেগ, ফোরকান খলিফা, সোহাগ মিয়া, মো. সাকিবসহ তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মনির ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনিরের সমর্থক শাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মন্ত্রী মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আমাদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। তখন আইনমন্ত্রী হট্টগোল দেখেছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন ও তাঁর লোকজন পেছন থেকে চেয়ারম্যানসহ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আমি কোনোভাবে চেয়ারম্যানকে রক্ষা করি।
আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনিরের সমর্থক শাখাওয়াত হোসেন

এ বিষয়ে শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আমাদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। তখন আইনমন্ত্রী হট্টগোল দেখেছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন ও তাঁর লোকজন পেছন থেকে চেয়ারম্যানসহ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আমি কোনোভাবে চেয়ারম্যানকে রক্ষা করি। বিষয়টি মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

এ ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত। কারণ, তাঁরা একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভ্যানগাড়ি থেকে দা, লাঠিসোঁটা নিয়ে আসেন।’

আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। মনির চেয়ারম্যানও লোকজন নিয়ে ফুল দিতে গিয়েছিল। দুই পক্ষের লোকজন অনেক বেশি হয়েছিল। এটি নিয়েই একটু হাতাহাতি হয়েছে। তেমন কিছু না।
আখাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত মুরাদ হোসেন

তবে এ ঘটনাকে সামান্য হাতাহাতি বলে উল্লেখ করেছেন আখাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। মনির চেয়ারম্যানও লোকজন নিয়ে ফুল দিতে গিয়েছিল। দুই পক্ষের লোকজন অনেক বেশি হয়েছিল। এটি নিয়েই একটু হাতাহাতি হয়েছে। তেমন কিছু না। মনির চেয়ারম্যানই লোকবল নিয়ে এমনটি ঘটাতে হাজির হয়েছিল।’

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দুটি পক্ষ আছে। তবে কোনো উত্তপ্ত পরিবেশ নেই। বর্তমানে উভয় পক্ষই শান্ত আছে। মন্ত্রী স্যার বিষয়টি দেখছেন।’