শীতের মিরসরাই, মনমাতানো, চোখধাঁধানো
অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলে দিগন্তজোড়া মাঠে মৃদু বাতাসে দুলছে আমনের শিষ। পাকা ধানের গায়ে মিষ্টি রোদের আভায় মাঠকে মনে হচ্ছে সোনালি বিছানা। সবুজের বাঁধন ছেড়ে তেমন এক মাঠের আলপথে নেমে পড়লে বাতাসে মিলবে পাকা ধানের ম–ম গন্ধ। ইতিউতি ঘুরলে দেখা যাবে কৃষকের ফসল ঘরে তোলার উৎসব। এমন এক বিকেলের সাক্ষী হতে আপনাকে আসতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। এখানে শুধু কি মাঠ-ফসলের শোভা, পাহাড়, নদী, হ্রদ আর সমুদ্রেঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি যে খুঁজে পাওয়া ভার।
চোখ জুড়াবে সবুজ পাহাড়
মিরসরাই উপজেলার পুরো পূর্ব পাশটাই সুউচ্চ পাহাড়ে ঘেরা। শীতেও ঘন সবুজ বনের এসব পাহাড়ে ঝরনার কলকল শব্দ আপনাকে দেবে ভিন্ন এক অনুভূতি। একটু সময় নিয়ে ঘুরলে এখানকার পাহাড়ি ট্রেইলগুলো হতে পারে আপনার ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অনুষঙ্গ। আর এসব বন পথে ঘুরতে গিয়ে দেখা মিলবে বানর, বনমোরগ নানা জাতের সাপসহ আরও অনেক প্রকৃতির সন্তানদের। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে পিপাসা মেটাবে ঝরনার শীতল জল। প্রশান্তি দেবে জাম, ডুমুর বা চাপালিশের ছায়া।
শান্ত হ্রদের স্নিগ্ধ শোভা
মিরসরাইয়ে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া। শান্ত টলটলে জলের এ হ্রদ এখন মিরসরাইয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। উঁচু পাহাড়ঘেরা এ হ্রদ এলাকার জীববৈচিত্র্য যেন প্রকৃতির পাঠশালা। স্বচ্ছ জলে মাছের ছোটাছুটি আনন্দ দেবে ছোট–বড় সবাইকে। কোলাহলহীন নৌকাভ্রমণ আর কায়াকিংয়ের আকর্ষণ পর্যটকদের বারবার টেনে আনে মহামায়া।
নদীর আহ্বান
দেশের আলোচিত ফেনী নদী বয়ে গেছে মিরসরাই উপজেলার পুরো উত্তর পাশটা জুড়ে। নদীর দুই ধারে হরেক রকম সবজির সবুজ খেত। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে নদীর জলে চোখে পড়বে ডাহুক মাছরাঙা পানকৌড়ির দাপাদাপি। কাছে যেতেই ডানা ঝাপটে উড়ে যাবে অতিথি পাখির ঝাঁক। সন্ধ্যা নামতেই নদীর পাড়ের ঝোপ থেকে ভেসে আসবে শিয়ালের হাঁক। এসব শুনতে শুনতে সূর্য পাটে গেলে নদীর ভাটিতে মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গিয়ে শেষ করা যাবে দিনের ভ্রমণ। সেখানে স্থানীয় লোকজনের হাতে তৈরি ‘টংদোকানের’ ধোঁয়া–ওঠা শর্ষে চিতই খেয়ে ঘরে ফেরার পথ ধরলে জীবনের প্রতি কোনো খেদ থাকবে না আর।
সমুদ্রের সৌন্দর্য টানে সবাইকে
মিরসরাইয়ের আরেক আকর্ষণ এ উপজেলার পুরো পশ্চিম পাশের দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রসৈকত। দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এ সমুদ্র উপকূলে গেলেই গাঙচিলের ওড়াউড়ি আর জেলে নৌকার বহর দেখে দেখে কেটে যাবে সময়। উপকূলে জোয়ার ভাটার হিসাব করে ঘাটে ভেড়া জেলে নৌকাগুলোয় দেখা মিলবে হরেক রকম তাজা সামুদ্রিক মাছ। বালুচরের লোনাজলে পা ভিজিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উদাস মনে জাগবে কত কথা।
কীভাবে যাবেন মিরসরাই
মিরসরাই উপজেলার বুক চিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চলে যাওয়ায় এ উপজেলায় যেতে তেমন ঝক্কি নেই। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে চেপে বসলেই চলে আসা যাবে এখানে। উপজেলা সদরে নেমেই এখান থেকে ঘুরতে যাওয়া যাবে উপজেলার যেকোনো প্রান্তে। ঘুরতে যেতে ন্যায্য ভাড়ায় পাওয়া যায় ব্যক্তিগত গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। দরদাম করে নির্দিষ্ট ভাড়ায় পুরো দিনের জন্য বা ঘণ্টা হিসেব করেও নেওয়া যাবে এসব গাড়ি।
থাকতে চাইলে
মিরসরাইয়ে বেড়াতে এসে রাতযাপন করতে চাইলে এখন আর ভাবনা নেই। পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বারইয়ারহাট পৌরবাজার ও বড়তাকিয়া বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল। নিরাপদ আবাসনের পাশাপাশি পর্যটকদের খাবারের ব্যবস্থাও আছে এসব হোটেলে। আবাসিক হোটেলের নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১ হাজার এবং এসি রুমের ভাড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।