বৃষ্টি প্রার্থনা করে বিভিন্ন স্থানে নামাজ ও দোয়া
প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ। জনজীবন হয়ে উঠেছে অসহনীয়। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টি চেয়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বৃহস্পতিবার নামাজ আদায় ও দোয়া করা হয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
বরিশাল: একে স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি করেন বরিশাল নগরের জামে কসাই মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কামাল উদ্দিন মঈনী। তিনি বলেন, ধারাবাহিক দাবদাহে দেশের মানুষ ও সব প্রাণী কষ্ট পাচ্ছে। এ জন্য এই নামাজ আদায় করা হয়েছে।
নামাজ আদায় করে রেজাউল করিম নামের একজন বলেন, ‘যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আমরা প্রথমেই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। এ নামাজ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে সেই কাজ করা হলো। সৃষ্টিকর্তা রহমত বর্ষণ করবেন বলে আশা করছি।’
বরিশালে এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ধারাবাহিক এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন।
মুসল্লিদের ভাষ্য, বৃষ্টি না হওয়ায় তাপপ্রবাহে দেশের মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টে লাঘবের জন্য আল্লাহর দরবারে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত, যা আরবিতে বলা হয় ‘ইসতিসকার’ বা পানি প্রার্থনা করা।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম মাওলানা মোতাসসিমবিল্লাহ জুনায়েদ। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে অনেক দিন ধরেই প্রচণ্ড গরম পড়েছে। মাঠ, ঘাট ও ফসলি খেত শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এখন বৃষ্টি খুবই দরকার। রাসুল (সা.) তাঁর সময়েও বৃষ্টির জন্য এমন সালাত আদায় করতেন। আমরাও আদায় করলাম। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলাম এবং বৃষ্টি চাইলাম।’
নামাজে অংশ নেন স্থানীয় শিক্ষক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে রোদের তাপ এত দেখিনি। ঘরের ভেতরে বা বাইরে কোথাও থাকা যাচ্ছে না। ফ্যানের বাতাসেও কাজ হচ্ছে না। এই গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই বৃষ্টির জন্য আমরা নামাজ আদায় ও দোয়া করলাম।’
খালেক নামের এক কৃষক বলেন, তাঁরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রচণ্ড রোদে মাঠ শুকিয়ে গেছে। আল্লাহ যেন বৃষ্টি দিয়ে তাঁদের উপকার করেন, সেই আশায় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছেন।
চাঁদপুর: চাঁদপুরে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের উদ্যোগে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিসকার’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন শহরের শাহতলী জিলানী চিশতী কলেজের প্রভাষক মাওলানা ছোহাইল আহমেদ চিশতী। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না হলে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করতেন। সেই অনুযায়ী, সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা করে ও ক্ষমা চেয়ে তাঁরাও দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
সৈয়দপুর (নীলফামারী): আজ বেলা ১১টার দিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়। নামাজে ইমামতি করেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার হজরাতুল আল্লামা ড. সৈয়্যদ এরশাদ আহমেদ আল বোখারী। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে প্রচণ্ড গরম, তাপপ্রবাহ ও খরা থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন উপস্থিত সবাই।
সেখানে উপস্থিত স্থানীয় কৃষক মইনুল বলেন, বৃষ্টিবাদল নেই। খুব তাপ। কলে পানি উঠছে না। খেত নষ্ট হচ্ছে। তাই বৃষ্টি চেয়ে নামাজের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে সবাই দোয়া করেছেন।