ব্যবসায়ীকে গুলির পর হেঁটে চলে যান মুখোশধারীরা

জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যার পর হেঁটে চলে যাচ্ছেন সন্ত্রাসীরাসিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি

কারও হাতে কিরিচ, কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। সবারই মুখোশ পরা। ধীরপায়ে হেঁটে চলছেন গ্রামীণ একটি রাস্তায়। চট্টগ্রামের রাউজানে গুলি করে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যার পর এভাবেই হেঁটে চলে যেতে দেখা যায় সন্ত্রাসীদের। একটি বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে বাড়ির মসজিদে যাওয়ার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনি উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আসদ আলী মাতব্বরপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবু সৈয়দের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জে শুঁটকির পাইকারি ব্যবসা করতেন জাহাঙ্গীর।

জাহাঙ্গীরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের চার দিন পার হলেও আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা মামলার সাহস পাচ্ছেন না বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে। কী কারণে জাহাঙ্গীরকে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়েও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না পুলিশ। কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি।

জাহাঙ্গীরকে গুলি করে হত্যার পর সন্ত্রাসীদের চলে যাওয়ার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ফুটেজে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসীকে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ডুল্লাপাড়া, মালাকারপাড়া, আসদ আলী মাতব্বরপাড়া হয়ে প্রকাশ্যে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সশস্ত্র এসব ব্যক্তিকে দেখে পালাতে দেখা যায় এলাকার লোকজনকে।

পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের শনাক্তের প্রক্রিয়া চলমান। গতকাল সোমবার দিনভর সন্ত্রাসীদের ধরতে বিভিন্ন বাড়ি ও সন্ত্রাসী আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে সন্ত্রাসীরা বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন, যার কারণে তাঁদের ধরা যাচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খুনের পর হত্যাকারীরা প্রায় তিন কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে অতিক্রম করেছেন। এতে অনেক সময় লাগার কথা। কিন্তু এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের ধরতে না পারা দুঃখজনক।

সম্প্রতি সরেজমিনে জাহাঙ্গীর আলমকে খুনের বিষয়ে এলাকার অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি। আলাপে জানান, নিহত জাহাঙ্গীর এলাকায় সজ্জন ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকায় তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। এলাকাবাসীর ধারণা, হয়তো চাঁদার জন্য তাঁকে খুন করেছেন সন্ত্রাসীরা।

জাহাঙ্গীরকে খুনের বিষয়ে মামলা না করার কারণ জানতে চাওয়া হয় তাঁর ছোট ভাই দিদারুল আলমের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী কারণে আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবই জানে। কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত, সেটিও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তারা চাইলেই খুনিদের আটক করতে পারে। খুনিদের আটকের পর আমরা মামলার বাদী হব। নইলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি আছে।’

রাউজান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শফিকুল ইসলাম চৌধুরী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলার বিষয়ে পরিবারকে রাজি করানো যাচ্ছে না। তারা বলছে পুলিশকে বাদী হয়ে মামলা করতে। পরিবারে যেহেতু লোকজন আছে, তাদেরই মামলা করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানায় যাতে পুলিশ ঢুকতে না পারে, সে জন্য পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এসব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে আস্তানায় যেতে যেতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।’

নিহত জাহাঙ্গীর আলম
ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরকে খুন করার সময় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মুহাম্মদ আব্বাস (৩৮) নামের একজন গুলিবিদ্ধ হন। তিনি জাহাঙ্গীরের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। নিহত জাহাঙ্গীরের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে বলে পরিবারসূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নে গত ১৮ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ বার গোলাগুলি, সংঘর্ষ, মারামারি এবং কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে বিএনপির স্থানীয় দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি পুলিশের। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২০টি বেশি।