একুশে পদক পেয়ে ‘মধুর যন্ত্রণায়’ দই বিক্রেতা জিয়াউল হক
সমাজসেবায় অবদান রাখায় বেসামরিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন দই বেচে বই বিতরণ করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পদক নিয়েছেন তিনি। রাতেই ঢাকা থেকে বাসে চেপে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রওনা দেন।
পৌঁছান আজ বুধবার সকালে। রাতভর বাসযাত্রার ধকল গেলেও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাননি ৯০ বছর বয়সী এই সমাজসেবী। সারা দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর বাড়িতে যান। ক্লান্ত শরীর নিয়েও তিনি হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলেন।
জিয়াউল হক আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্লান্তিতে ভেঙে পড়া শরীরে বল নেই। কিন্তু মনে বল নিয়ে হাসিমুখে সবার সঙ্গেই কথা বলেছি। এ যেন এক মধুর যন্ত্রণা। মনে হয়েছে, রাজ্য জয় করে আসা মানুষ আমি। তাই মানুষের সঙ্গে কথা বলতে কোনো বিরক্তি বোধ করিনি।’
স্বজনেরা জানান, আজ সকালে ঢাকা থেকে ফেরার পর অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসীসহ প্রশাসনের লোকজনও জিয়াউলের বাড়িতে আসেন। বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশের বিদ্যালয় মুসরীভূজা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে একুশের শোভাযাত্রা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বললে জিয়াউল সেখানে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান ও পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে আসেন। জেলা প্রশাসক তাঁকে বই উপহার দেন। এ সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। পরে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তাঁকে সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে ফিরে বেলা তিনটার দিকে ঘুমাতে যান জিয়াউল হক। একটু ঘুম আসতেই নওগাঁ থেকে এক সংবাদকর্মী আসেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে আরও অনেকেই বাড়িতে দেখা করতে আসেন। এভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বাড়িতে আসা মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
রাত সোয়া আটটার দিকে আবার কল করলে ফোন ধরেন জিয়াউল হকের ছেলে মোহাব্বত হক। তিনি বলেন, ‘এলজিইডির কর্মকর্তাসহ মানুষজনে ঘর ভর্তি। তাঁদের সঙ্গেই আব্বা কথা বলছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না। কল ধরতে ধরতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু আব্বা দিব্যি হাসিমুখে কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি অবাক হচ্ছি, তাঁর শরীর নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে।’
মুঠোফোনে কথা হয় জিয়াউল হকের স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতের বাসে স্বামীর বাড়িতে ফেরার কথা শুনে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। সকালে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাড়ির সামনে রাস্তায় গাড়ি থেকে নামতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। বাড়িতে এসে তিনি প্রথমেই স্বর্ণপদকটি আমার গলায় পরিয়ে দেন। আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। জীবনে এমন অনুভূতি কাউকে বোঝাতে পারব না।’