ঠিকাদারের সঙ্গে ঘুষের টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, প্রকৌশলী বললেন, ‘তর্ক করেন না তো’

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

মেহেরপুরে গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা নিয়ে তাঁর সঙ্গে এক ঠিকাদারের বাগ্‌বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।  

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিও একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে এম এ মান্নান নামের ওই ঠিকাদারের সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলতে শোনা যায়। শহিদুলের উদ্দেশে মান্নান বলেন, ‘১ পার্সেন্ট কীভাবে নেবেন আপনি?’ জবাবে শহিদুল বলেন, ‘তর্ক করেন না তো।’ মান্নান আবার বলেন, ‘না, না তর্ক করা না তো। আপনি সাইটে গেলেও ২–৩ হাজার করে নেবেন এক দিনে। আবার এদিকে ট্যাকা ১ পার্সেন্ট করেও নেবেন। হেই আমি কীভাবে দেব?’ এ সময় শহিদুলকে বলতে শোনা যায়, ‘চেঁচাচ্ছেন কেন?’

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাংনীর রায়পুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রাম্য বাজার থেকে কৃষিমাঠ পর্যন্ত ৬৯৩ মিটার পাকা সড়ক তৈরির কাজ পেয়েছেন মেহেরপুর পৌর শহরের বাসিন্দা কাজী শাহিন বিশ্বাস। তবে কাজটি করছেন গাংনী উপজেলার এম এ মান্নান। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে শেষ হওয়ার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের কার্যালয়ের যান ঠিকাদার এম এ মান্নান। তখন তাঁদের মধ্যে এসব কথোপকথন হয়। ওই কার্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ওয়ার্ক অর্ডারের ভিত্তিতে প্রতি প্রকল্প থেকে ১ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেন উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। কিছু প্রকল্পে তিনি চাহিদামতো ঘুষের টাকা পাননি। এ জন্য তিনি আরও বেশি টাকা দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ঠিকাদার এম এ মান্নান। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।

ঠিকাদার এম এ মান্নান অভিযোগ করেন, প্রকৌশলী শহিদুল নিয়মিতভাবে ঘুষ আদায়ে চাপ দেন। চলমান কাজ পরিদর্শনের সময় প্রতিদিন ৩-৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কাজের বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। অনেক সময় বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়, না হলে কাজ আটকে যায়।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার এম এ মান্নান একটি কাজের বিল উত্তোলনের জন্য কয়েক দিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। কাজ শেষ না করে বিল দিলে ঝামেলায় পড়তে হবে, এ কারণে তাঁকে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি একজনকে সঙ্গে এনে ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি একাই কথা বলছেন। আমাকে হেয় করার জন্য ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

ঘুষের টাকার লেনদেনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন। মেহেরপুর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ঘুষ নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’