গ্রামের পিচঢালা পথ ধরে হাঁটার সময় চোখ আটকে গেল নতুন নির্মিত স্থাপনায়। কয়েক মাস আগেও জায়গাটা ফাঁকা ছিল। সেখানে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিশুপার্ক। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্রাঙ্গণে সেই পার্কে প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের শিশুরা এসে আনন্দে মাতে, হইহুল্লোড় করে। সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না; এ এক ভিন্ন রকম ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণ।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ধামেরহাট বাজারের পাশে ৩ নম্বর তিলাই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুপার্কটি স্থাপিত হয়েছে। নিজের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় পার্কটি স্থাপন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদটির চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান। তাঁর ভাষ্য, শিশুপার্ক নির্মাণে সরকারি কোনো বরাদ্দ ছিল না। নিজের উদ্যোগ, কিছু মানুষের সহযোগিতা এবং টিআর-কাবিখা প্রকল্প থেকে অর্থ বাঁচিয়ে জনস্বার্থে শিশুপার্কটি স্থাপন করেছেন। বিকেলে পার্কে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আনন্দ নিয়ে খেলে। ওদের আনন্দ দেখে তিনিও নির্মল আনন্দ পান।
রড-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বাঘ, সিংহ, হরিণ, হাতি, জিরাফ, বক, দোয়েল, টিয়া, হাঁস, ক্যাঙারু, জেব্রা, ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণী সাজানো। শিশুরা কৃত্রিম এসব পশু-প্রাণীর পিঠে চড়ে আনন্দে মাতে।
ইউপি কার্যালয়টির নামে জমি আছে প্রায় ১০০ শতাংশ (এক একর)। এর মধ্যে ৮ শতাংশ জমির ওপর পার্কটি স্থাপিত হয়েছে। পার্কটি স্থাপনে আট লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সম্প্রতি পার্কে ঘুরে দেখা যায়, রড-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বাঘ, সিংহ, হরিণ, হাতি, জিরাফ, বক, দোয়েল, টিয়া, হাঁস, ক্যাঙারু, জেব্রা, ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণী সাজানো। শিশুরা কৃত্রিম এসব পশু-প্রাণীর পিঠে চড়ে আনন্দে মাতে। পার্কে আছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিফলক ও খেলনা ঘর।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, যেকোনো কর্মক্ষেত্র সুন্দর করে সাজানো নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। কোনো বরাদ্দ ছাড়াই ইউপি চেয়ারম্যান শিশুপার্কের মাধ্যমে সেটি করেছেন, যা ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।
পার্কের পাশে করা হয়েছে সাইকেল ও মোটরসাইকেলের গ্যারেজ। হাটবাজারে আসা মানুষ সেখানে বিনা মূল্যে তাঁদের পরিবহন রাখতে পারেন। পার্ক ও গ্যারেজ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ খুশি বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদটির সচিব মো. রুহুল আমিন।
দুই সন্তানকে নিয়ে প্রায়ই পার্কে আসেন ধামেরহাট এলাকার বাসিন্দা ও ঠিকাদার শিপন আহম্মেদ। তিনি বলেন, পার্কে এসে তাঁর দুই ছেলে ভীষণ আনন্দ পায়। এ জন্য প্রায়ই দুই সন্তানকে নিয়ে পার্কে আসেন। প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুদের বিনোদন ও বিকাশের জন্য এমন পার্ক স্থাপন করায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ।
কোনো ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এমন শিশুপার্ক দেখেননি। এটা দেখে অন্য ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণগুলোতে শিশুপার্ক স্থাপনে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিতে পারেন।
পার্কটির অন্য পাশে নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক একটি গণশৌচাগার। শৌচাগারের দুটি অংশ। এক পাশ নারীদের ব্যবহারের জন্য, আরেক পাশ পুরুষদের। সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য শৌচাগারটি উন্মুক্ত থাকবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নের শৌচাগারটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। তাঁর ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের প্রবণতা আছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কিছু জমি বেদখল আছে। সেই জমি দখলমুক্ত করে জনস্বার্থে কাজে লাগাতে চান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের তরুণ শিক্ষক ইমরুল কায়েস বলেন, সবখানে খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। তাই শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য সব এলাকায় পার্ক থাকা দরকার। তিনি কোনো ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এমন শিশুপার্ক দেখেননি। এটা দেখে অন্য ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণগুলোতে শিশুপার্ক স্থাপনে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিতে পারেন।