শাহ আরেফিন টিলার পাথর লুটের ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে মামলা
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ‘পাথরের খনি’ হিসেবে পরিচিত শাহ আরেফিন টিলা কেটে পাথর লুটের ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন। তবে দলে তাঁদের কোনো পদ–পদবি নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (পরিবেশ) পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা মামলাটি করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা/পাহাড় কেটে পাথর তোলার অভিযোগে এ মামলা করা হয় বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বদরুল হুদা।
এর আগে ৪ জানুয়ারি প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা নিয়ে ‘পাথরের খনি এখন কঙ্কাল’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২৩ জানুয়ারি স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে সত্যতা পেয়ে মামলা করে।
এদিকে সিলেট সদর উপজেলার আঙ্গুরুয়া মৌজার অধীনে থাকা লাখাউড়া গ্রামে টিলা কেটে বিক্রির উদ্দেশ্যে প্লট তৈরি করার অভিযোগে চারজনকে আসামি করে গতকাল আরেকটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের চিকাডহর মৌজায় অবস্থিত শাহ আরেফিন টিলা এলাকার মাজার, কবরস্থান ও সরকারি খাসখতিয়ানের জমিতে স্থানীয় শ্রমিকদের প্ররোচিত করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর তোলার মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশব্যবস্থার ক্ষতি করছিলেন কিছু ব্যক্তি। এ ঘটনায় ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬ (খ) লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করা হয়।
মামলায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বিএনপিপন্থী রাজনৈতিক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে (৪৫) প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার জালিয়ারপাড় গ্রামের মনির মিয়া, আবদুল করিম ও আবদুর রশিদ, চিকাডহর নারাইনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী, আঞ্জু মিয়া, সোহরাব আলী, তৈয়ব আলী, বতুল্লাহ মিয়া প্রমুখকে আসামি করা হয়। আসামিদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এজাহারে বলা হয়, ২৩ জানুয়ারি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে কয়েক শ শ্রমিক দিয়ে রেকর্ডীয় ও দৃশ্যমান টিলা ভূমি থেকে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করছিলেন। আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে শাহ আরেফিন টিলার পার্শ্ববর্তী জালিয়ারপাড়, চিকাডহর নারাইনপুর গ্রামের শত শত শ্রমিক নিয়োজিত করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করাচ্ছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর পরিবেশ আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ আরেকটি মামলা করেন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ২৫ জানুয়ারি তিনি সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারুয়া মৌজায় অবস্থিত লাখাউড়া গ্রামের একটি টিলা পরিদর্শনে গিয়ে দুটি অংশ কেটে মাটি অপসারণ করে প্লট তৈরি করার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। ওই স্থানে প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৭০০ ঘনফুট টিলার মাটি বেআইনিভাবে কেটে অপসারণ করা হয়।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, উপস্থিত লোকজন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে বেআইনিভাবে টিলার কাটায় চারজনের নাম মামলার বাদী জানতে পেরেছেন। তাঁদের এই মামলায় আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন সিলেট নগরের পূর্ব পাঠানটুলা এলাকার আজিজ খান (সজীব), সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের মো. আবদুর রাজ্জাক খান, নগরের নোয়াপাড়া এলাকার ফয়জুল হক এবং সদর উপজেলার মালনীছড়া কোম্পানী বাংলোর দেওয়ান শাকিব আহমদ।