যশোর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর-আগুন
যশোর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে সাতক্ষীরার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বাসিন্দারা। গত সোম ও মঙ্গলবার এসব ঘটনা ঘটে। তবে গতকাল বুধবার নতুন করে হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।
যশোর শহরের বেজপাড়ার বনানী সড়কে সোমবার রাত সোয়া নয়টার দিকে লক্ষ্মী রানী বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে লক্ষ্মী রানীর আয়ের একমাত্র অবলম্বন সেলাই মেশিন, রান্নার চুলা, গ্যাসের সিলিন্ডার এবং আলমারিতে রাখা ভাইয়ের সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর ১০ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
একই সময়ে একই পাড়ার বাসিন্দা চাকরিজীবী শংকর কুমার মল্লিক ও ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা নামের দুজনের বাড়ির ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করার চেষ্টা করে। মূল ফটক ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে জানালার থাই কাচ ভাঙচুর করে।
এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা শহরের রেলসড়কে অবস্থিত যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ছেলে পার্থপ্রতিম নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাথ কম্পিউটারে হামলা করে লুটপাট করেছে। এ সময় দোকান ও তিনটি গুদামে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এসি, রাউটার ও আমদানি করা যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
একই সঙ্গে মোহিত নাথের ব্যক্তিগত অফিস ও তাঁর প্রকাশনায় প্রকাশিত দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকা অফিস ভাঙচুর করে ১০টি কম্পিউটার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একই জায়গায় অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোং মদের পরিবেশক সুকুমার কুমারের এফএল শপ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
সাতক্ষীরা
মঙ্গলবার সাতক্ষীরার তালার খলিশখালী গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ লাহিড়ি, হাজরাপাড়া গ্রামের সুব্রত লাহিড়ি এবং কুমিরা গ্রামের স্বপন দে, মধু ঘোষ, প্রদীপ পাল, অচিন্ত্য দাস, আদিত্য ঘোষ, আশিষ ঘোষেরসহ ৮-১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গণেশ দেবনাথ ও একই এলাকার দেবাশীষ মুখার্জি, খলিলনগর ইউপির চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ, ইসলামকাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ সেনের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তালার পাটকেলঘাটা এলাকার শিবু ঘোষ জানান, তাঁর মিষ্টির কারখানা থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার জিনিসপত্র লুট হয়েছে। খলিলনগর ইউপির হাজরাকাটি গ্রামের আবদুর রবের ভাড়া দেওয়া ৩৮ দোকানের ৩৭টিতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার সরাফপুর গ্রামের সঞ্জয় কুমার দাসের ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাঁর ১৫টি ছাগলসহ ঘেরের অন্যান্য জিনিসও লুট হয়। এ ছাড়া শ্যামনগরের যতীন্দ্রনগর এলাকার আহমদিয়া জামাত সম্প্রদায়ের বাসিন্দা সেলিনা সাঈদ, এজাজ আহমদ, আবদুল মুজিদ সরদার, রবিউল ইসলাম, মাতিয়ার রহমান ও সফিকুল ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সুন্দরবন বাজারের সেলিম রেজা ও সুফিয়ান সরদার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শেখ মাহফুজুর রহমানের জমি এবং মতিউর রহমানের ঘের ও জমি দখল করেছে দুর্বৃত্তরা।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পাখিমারা বাজারসহ পার্শ্ববর্তী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাখিমারা বাজারে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থকের দোকানপাটেও হামলা হয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবারের এসব ঘটনায় ওই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে গতকাল বুধবার বিকেলে পাখিমারা বাজারে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি। সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আর কোনো হামলা হবে না। সংখ্যালঘুদের কারও ক্ষতি হলে তিনি আর দলের সভাপতি থাকবেন না।
[নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা, যশোর অফিস ও প্রতিনিধি, কলাপাড়া, পটুয়াখালী]