রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে গত ৫ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে ৩১টি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল সোনাদানা ও নগদ টাকাপয়সার সঙ্গে রেফ্রিজারেটরে থাকা মাংসও চুরি করে করে নিয়ে যাচ্ছে। উপর্যুপরি চুরির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কিংবা মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এলাকার বইপ্রেমী পলান সরকারের পাঠাগারও চোরের শ্যেন দৃষ্টি থেকে বাদ যায়নি। যদিও বইপুস্তক ছাড়া মূল্যবান কিছু না পেয়ে চোরেরা কিছুই নিয়ে যায়নি।
ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, চোরেরা সাধারণত বাড়ির সীমানাপ্রাচীর টপকে, জানালা বা ব্যালকনির গ্রিল কেটে ঘরের ভেতরে ঢুকছে। এলাকার শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে বেশি। সাধারণত যে ঘরে কেউ ঘুমান না, সেই ঘরেই হানা দিচ্ছে চোর।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ জুন বাউসা ইউনিয়নের দিঘা হিন্দুপাড়া গ্রামের এনামুল হকের আধা পাকা বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে চোর। তারা বাক্স ভেঙে সাড়ে ৫ ভরি সোনার গয়না চুরি করে নিয়ে যায়। এনামুল হক জানান, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রিল কাটা দেখে চুরির ঘটনা বুঝতে পারি। গত ৩০ বছর এই বাড়িতে থাকছি। কখনো এমন চুরির ঘটনা দেখিনি।’
৯ জুন রাতে ইউনিয়নের দুটি গ্রামের ছয়টি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। বাউসা পূর্বপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের বাড়ির একটি কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে ১ ভরি সোনার গয়না ও নগদ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। একই রাতে র্যাবে কর্মরত আবদুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা, বাউসা সরকারপাড়া গ্রামের মুকুল সরকারের বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ছাড়া মো. সান্টু, কলেজশিক্ষক খলিলুর রহমানসহ পলান সরকারের পাঠাগারের গ্রিল কেটে চোর ঢুকলেও সোনাদানা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়।
বাউসার দিঘা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও দিঘা মাস্টারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাজাহান আলী জানান, ১২ জুন তাঁর বাড়িতে চুরি হয়। সড়ক-সংলগ্ন তাঁর ফ্ল্যাট বাড়ির একটি কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে চোর ঢুকে সাড়ে ৬ ভরি সোনা ও ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের গয়নাগুলো বাক্সের ভেতরে কাপড়ের মধ্যে রাখা ছিল। সকালে ঘরের ভেতরে জিনিসপত্র এলোমেলো দেখে চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
১৫ জুন দিঘা বলারবাড়ি গ্রামের চারটি বাড়িতে চুরি হয়। গ্রামের আবদুর রহিমের বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে কিছুই না পেয়ে বাক্সের কাপড়চোপড় এলোমেলো করে রেখে যায়। একইভাবে গ্রামের নাসির উদ্দিনের বাড়িতে ঢুকে কাপড়চোপড় এলোমেলো করতেই বাড়ির লোক জেগে গেলে চোর পালিয়ে যায়। ওই রাতেই গ্রামের আবদুল বারী মাস্টারের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে চোরের দল। বাড়ির মালিকের কাশির শব্দ পেয়ে পালিয়ে যায়। এরপর গ্রামের আনছার আলীর বাড়িতে ঢুকে কিছু না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়।
২০ জুন দিঘা পশ্চিম পাড়ার প্রেমানন্দ কর্মকারের বাড়ি ও রহিমের বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে চোরর দল। বাড়ির মালিক জেগে গেলে মালামাল চুরি না করে বেরিয়ে যায়। মালিকের হাঁকডাকে লোকজন ধাওয়া করেও চোর ধরতে পারেননি। গ্রামের বাতেন আলী প্রথম আলোকে বলেন, কেউ ছিল না এমন একটি ঘরে তোশকের নিচে মাত্র ৩০ টাকা রাখা ছিল। চোরেরা কিছু না পেয়ে সেই টাকাটা নিয়ে গেছে। একই রাতে গ্রামের আমিরুল ইসলাম, দিঘা বলারবাড়ি গ্রামের মুত্তালিব হোসেন, দিঘা কবিরাজ পাড়া গ্রামের আদম আলীর বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
দিঘা হাজীপাড়া মসজিদ কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান জানান, তালা ভেঙে মসজিদের ভেতরে ঢুকেছিল চোর। কিছু পয়সা ছাড়া ভেতরে কিছু ছিল না। পরে খালি হাতে ফিরে যায়। ওই রাতে দিঘা আঠালিপাড়ার আলম হোসেনের বাড়ি থেকে দুটি ফোন নিয়ে যায়। দিঘা বলারবাড়ি গ্রামের আরও তিন বাড়িতে হানা দিলেও চোর কিছু নিতে পারেনি। ২৮ জুন দিঘা পশ্চিম পাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি থেকে তাড়া খেয়ে ওই রাতেই দিঘা আঠালিয়া পাড়া গ্রামের বজলুর রহমানের বাড়ি থেকে তাঁর ভাড়ায় ব্যবহৃত তিন চাকার উলকা গাড়িটি চুরি করে নিয়ে যায়।
২৯ জুন রাতে দিঘা আঠালিয়া পাড়া গ্রামে জমিরের বাড়ি থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা দামের দুটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। ৩০ জুন রাতে দিঘা নওদাপাড়া কাশেম আলী ও আবুল কালামের বাড়িতে হানা দিলে জেগে গিয়ে তাঁরা চোরকে ধাওয়া করেন। ৪ জুলাই দিঘা আঠালিয়া পাড়া গ্রামের পুলিশ সদস্য আশরাফুল আশেকিনের বাড়িতে ধাওয়া খেয়ে দিঘা নওদাপাড়া গ্রামের মুক্তার আলীর বাড়ির জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে নগদ দেড় হাজার টাকা ও রেফ্রিজারেটর খুলে ২ কেজি মাংস নিয়ে যায়। ৫ জুলাই রাতে বাউসা ইউনিয়নের অমরপুর গ্রামে হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ঢুকে দেড় লাখ টাকা দামের একটি গরু বের করে। মালিক জেগে গিয়ে চিৎকার দিলে গরু ফেলে বাইরে রাখা ভটভটিতে চোর পালিয়ে যায়।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, লালপুর থানার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। বাউসা ইউনিয়নের পরিস্থিতি খুব খারাপ। তিনি দাবি করেন, চুরির ঘটনায় মামলাও হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁরা দুটি ভ্যান চুরির মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন।