পাঁচ বালুমহাল ইজারা না দিতে ১৩ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ

কক্সবাজার জেলার মানচিত্র

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনের নিকটবর্তী পাঁচ বালুমহাল ইজারা না দিতে দুই সচিবসহ সরকারি ১৩ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠান বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা। নোটিশে এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

নোটিশে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালি-১, রামু উপজেলার ধলিরছড়া ও পানিরছড়া এবং উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও হিজলিয়া বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করে ইজারাবহির্ভূত রাখতে বলা হয়। একই সঙ্গে উল্লেখিত বালুমহালগুলো ইজারাযোগ্য বালুমহালের তালিকাবহির্ভূত না করা পর্যন্ত ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে খুটাখালি খালের সীমানা নির্ধারণ করে খালটি রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে নোটিশে।

যাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; প্রধান বন সংরক্ষক; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার; কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক; কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা; কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা; চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল।

নোটিশে বলা হয়েছে, ১৪৩২ বাংলা সনে ইজারা দেওয়ার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ইজারাযোগ্য ২৭টি বালুমহালের তালিকা প্রস্তুত করে ১১ মার্চ ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। ইজারাযোগ্য ২৭টি বালুমহালের মধ্যে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালি ১, রামু উপজেলার ধলিরছড়া ও পানিরছড়া বালুমহাল, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও হিজলিয়া অন্যতম। খুটাখালি-১ বালুমহাল মূলত একটি খাল, যা স্থানীয়ভাবে খুটাখালি খাল নামে পরিচিত। এটি সংরক্ষিত বনভূমির পাশে অবস্থিত। এ বনাঞ্চল বিপন্ন এশিয়ান বন্য হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। বানর, হনুমান, বন মোরগ, শূকর, শজারু, হরিণ, শিয়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে এ বনে। এর আগে এ বালুমহাল ইজারা দেওয়ার কারণে সংরক্ষিত বনভূমির পাহাড়ধসে সংরক্ষিত বন ও বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এতে খালের গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় বিগত ১৪২৯, ১৪৩০ ও ১৪৩১ বঙ্গাব্দে ইজারা দেওয়া হয়নি। রামু উপজেলার ধলিরছড়া, পানিরছড়া বালুমহাল, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও হিজলিয়া বালুমহালও বনভূমির ১০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। ইতিমধ্যে বনভূমি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কায় উল্লিখিত বালুমহালের ইজারা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটার সীমানার মধ্যে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বালুমহাল চিহ্নিত ও ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পরিদর্শন করে ট্রেসম্যাপ, তফসিলসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ধস, ভূমিধস বা খালের গতিপথ পরিবর্তন হবে কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বালু তোলার ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করার বিধান রয়েছে। বালু তোলার নেতিবাচক প্রভাবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছে বিধায় বালুমহাল ঘোষণা ও ইজারার আগে আইনি বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন ও প্রয়োগ করা নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ব, যা পালনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।