ফরিদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় তিন থানায় চারটি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনটি মামলায় এজাহারভুক্ত ৬৮ আসামির মধ্যে ২১ জন ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পাশাপাশি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আছেন। এ ছাড়া প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে।
চারটি মামলার মধ্যে ফরিদপুরের কোতোয়ালি ও ভাঙ্গা থানায় একটি করে এবং সদরপুর থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। সদরপুরের দুটি মামলার মধ্যে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের হামলার ঘটনায় করা মামলায় সাতজনকে আসামি করা হলেও কোনো ছাত্রকে আসামি করা হয়নি। বাকি তিন থানায় করা মামলায় ছাত্রদের আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলার মধ্যে ভাঙ্গায় ২৫০ থেকে ৩০০ এবং অন্য দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ‘আরও অনেকে’ উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদের আসামি না করার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের নাগরিক সমাজের লোকজন এসব মামলায় ছাত্রদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশকে অধিক দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, মামলাগুলো আগে হয়েছে। এ ব্যাপারে ওপরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে পুলিশ।
১৭ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুরের সদরপুর কলেজ থেকে বিক্ষোভকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করে। ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি ‘আরও অনেকে’। এজাহারভুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনই ছাত্র। তাঁরা সবাই সদরপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
১৮ জুলাই শহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনজন।
গ্রেপ্তার দুই নেতা হলেন ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী এবং সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুর এলাকার শাহ মো. শের আলমের ছেলে শাহ মো. আরাফাত (২৩) ও নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের কাদের বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (২০)। তাঁরা দুজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এ ছাড়া ১৯ জুলাই বিকেলে ভাঙ্গার আলগি ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কাঠের গুঁড়িতে আগুন দিয়ে অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। মামলায় ৫ ছাত্রকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন ভাঙ্গার কাজী মাহাবুবুল্লাহ সরকারি কালেজের তিন শিক্ষার্থী আকরাম মাতুব্বর (২০), মেহেদী মাতুব্বর (২০) ও মো. মুরসালিন (১৮) এবং নগরকান্দা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ও ছোট নাওডুবি গ্রামের মো. উজ্জলের ছেলে সাব্বির (২২) ও শাওন (১৮)। তাঁদের মধ্যে আকরাম ও মেহেদী উপজেলার আলগি ইউনিয়নের সোতাশী গ্রামের বাসিন্দা। মেহেদীর বাবা দেলোয়ার মাতুব্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মামলার প্রধান আসামি। মুরসালিন নগরকান্দার কাইচাইল ইউনিয়নের ছোট নাওডুবি গ্রামের বাসিন্দা।
ছাত্রদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাগুলো আগে হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের “ছাত্রদের আসামি করা হবে না” বক্তব্য পর এসেছে। আমরা অবশ্যই ওপরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।’
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্ররা আমাদের ভবিষ্যৎ। তিনটি মামলায় যে ২১ জন ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে, তদন্তের সময় তাঁদের ব্যাপারে পুলিশকে অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে। নির্দোষ কেউ যাতে কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সজাগ থাকতে হবে।’