আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলটি বের করা হয় কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে। উভয় মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থীও অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘খুনি লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে, করতে হবে’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভের পর সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় বক্তারা প্রধান উপদেষ্টার এক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। আওয়ামী লীগের বিষয়ে বক্তাদের ভাষ্য, যে ফ্যাসিস্ট দল বাংলাদেশে একাধিক গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন কোনো কারণ দরকার নেই।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘আমরা মনে করি, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে বিদায় করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ইন্টেরিমকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগকে ফেরানোর কোনো পরিকল্পনা যদি আপনারা করেন, তাহলে ছাত্র-জনতা কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটা আপনারা ২৪–এ দেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে এই বাংলায় কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম, রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া যাবে না৷ ইন্টেরিমের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে অতিদ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন।’
সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য একটি দুঃখের দিন। কারণ, ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়েও আমাদের আবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। অথচ ৫ আগস্ট জনগণ গণভোটের মাধ্যমে রায় দিয়ে দিছিল, বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ চলবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলা মানে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করবে, সেটা ঠিক করবে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। পাশের দেশের কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে আর বাংলাদেশ চলবে না।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে তালাইমারি মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
একই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরের পাশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে’, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
আজ দুপুরের সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম। এ সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সালাউদ্দিন আম্মার, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন মেহেদী সজীব। তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, যেদিন আবু সাঈদের রক্তে রংপুরের জমিন লাল হয়েছে, সেদিনই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল যখন রাজনীতি বাদ দিয়ে গণহত্যা, গুম, খুন ও ত্রাসের রাজনীতিতে মেতে উঠে, তখন সেটাকে নাৎসি পার্টি হিসেবে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রশ্ন তো আমরা ৫ আগস্টে নিশ্চিত করে ফেলেছি। আওয়ামী লীগকে আর বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ যদি রাজনীতিতে ফিরে আসতে চায়, তাহলে দুই হাজার শহীদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। ৩০ হাজার আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ভাইবোনদের হাত-পা ফিরিয়ে দিতে হবে, দৃষ্টিশক্তি হারানো ভাইবোনদের চোখ ফিরিয়ে দিতে হবে।’